ভারসাম্যপূর্ণ খাবার এবং ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য উত্তম বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিদরা। আর এতে আলঝেইমার্সের মতো রোগের ঝুঁকি কমে আসে। এটা সেই রোগ যার কারণে স্মৃতিশক্তির বারোটা বেজে যায়। ক্রমেই ক্ষয় ঘটে স্মৃতিশক্তির। বয়সের সঙ্গে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্মৃতিশক্তি নষ্টের আরো কিছু অদ্ভুত কারণ বিশেষজ্ঞরা মতে নিচে তুলে ধরা হলো-
থায়ামিনের অভাব:
আমাদের দেহে থায়ামিনের অভাব হলে আমরা স্মৃতিশক্তি দুর্বলতা রোগে পরে থাকি। থায়ামিন এবং ভিটামিন-বি আমাদের নার্ভ সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। থায়ামিনের অভাবে নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারে ভুগতে দেখা যায় অনেককে। তাই স্মৃতিশক্তির দুর্বলতাকে অবহেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।
সব সময় বিষণ্ণ থাকা:
জীবনে অনেক কিছুই থাকে মন খারাপ করে থাকার জন্য। কিন্তু তাই বলে সব সময় বিষণ্ণ থাকাটা একেবারেই উচিত নয়। এতে মনের ওপর তো চাপ পরেই সেই সাথে ভাপ পড়ে আপনার মস্তিষ্কের ওপরে। এতে মস্তিষ্কে ‘কারটিসোল’ নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে যা মস্তিষ্কের ‘সিন্যাপ্স’ যা মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যকার সংযোগ বজায় রাখে তা নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়।
তাই নিজেকে খুশি রাখার চেষ্টা করুন একটু কষ্ট হলেও। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেয়া ও দুশ্চিন্তা করা অনেকেই কারণে অকারনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে থাকেন এবং দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। অতিরিক্ত মানসিক চাপের অর্থ মস্তিষ্কের ওপর অনেক বেশি মাত্রায় চাপ ফেলা।
এতে করেও স্ট্রেস হরমোন কারিসোলের নিঃসরণ ঘটে যা মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যকার সংযোগে ব্যাঘাত ঘটায় ‘সিন্যাপ্স’ নষ্ট করে দিয়ে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা করে তো লাভ হচ্ছে না। তাই অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে সমাধান খুঁজুন সব কিছুর।
ধূমপান করা:
দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। কারণ ধূমপানের ফলে আমাদের হৃদপিণ্ড মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে।
এতে করে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করে না। এবং এর প্রথম প্রভাবই পড়ে স্মৃতিশক্তির ওপর। তাই ধূমপান বন্ধ করুন আজই।
একাকিত্ব:
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কারণ স্মৃতিশক্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মোটকথা একাকিত্ব মস্তিষ্কের বারোটা বাজায়। তবে অনেকে বলেন, একাকী থাকার কারণে আলঝেইমার্স হয় না। বরং আলঝেইমার্সে আক্রান্তরা ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম:
অসময়ে খাওরার অভ্যাস কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়। তেমনি ভালো নয় স্মৃতিশক্তির জন্যেও। সময়ের চেয়ে দেরি করে খুব বেশি পরিমাণ খেলে ভয়াবহতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আলঝেইমার্স রোগীদের দ্রুত রাতের খাবারের পর সকালের নাস্তার আগে কোনো কিছু খেতে মানা করেন চিকিৎসকরা।
অপর্যাপ্ত ঘুম:
স্মৃতিশক্তি তীক্ষ রাখতে চাইলে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। রাতে যদি নিয়মিত ঘুম না হয় তাহলে মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং এতে স্মৃতিবিধ্বংসী রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাই অকালে স্মৃতিশক্তি হারাতে না চাইলে নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
দূষণ:
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, দূষিত এলাকায় বসবাসকারী নারীদের মাঝে স্মৃতিভ্রংশ রোগে আক্রান্তের হার বেশি। তবে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত এলাকায় এ রোগের হার কম। দূষিত পদার্থ নানাভাবে আমাদের দেহে প্রবেশ করে স্মৃতিশক্তি নষ্ট করে।
অস্বাস্থ্যকর খাবার:
আপনি কী খাচ্ছেন, এর ওপরও নির্ভর করে আপনার স্মৃতিশক্তি। আপনি যদি অস্বাস্থ্যকর খাবার খান, তাহলে স্মৃতি দুর্বল হয়ে পড়বে। একইভাবে আপনি যদি রাতে দেরি করে খান এবং অতিরিক্ত খান তাহলেও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে।
সামাজিকতার অভাব:
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একাকিত্বে ভোগে তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। একইভাবে অসামাজিক ব্যক্তিরাও স্মৃতিশক্তির দুর্বলতায় ভোগে। তাই স্মৃতিশক্তি ভালো করতে চাইলে সামাজিকতার গুরুত্ব দিতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ:
উচ্চ রক্তচাপ শুধু আপনার দেহের জন্যই ক্ষতিকর নয়, এটি মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে। আর এ কারণে স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে রক্তচাপ সঠিক মাত্রায় রাখা জরুরি।