মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। বিগত বছরগুলোতে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একই দিন একই সময়ে নেয়া হলেও চলতি বছর এই পরীক্ষা পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেতা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা জানান, আগামী ১৯ জুন সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার পৃথক দিনক্ষণ নির্ধারণসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার আগে ও পরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা, ভর্তির সুযোগ বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের রাজপথে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এমনকি আমরণ অনশন কর্মসূচি পালনের ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগাম সতর্কতা হিসেবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভিসি, ডিন, প্রিন্সিপাল ও চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। গণমাধ্যম কর্মীদের মতামতও নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ সোমবার আলাপকালে বলেন, চলতি বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো অভিযোগ ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের জন্য যা যা করা দরকার তাই করা হবে। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে করণীয় নির্ধারণ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর গণমাধ্যম থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের নানা খবর প্রকাশিত হয়। সে জন্য সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়ার জন্য কী কী করা যেতে পারে সে ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের পরামর্শ নেয়া হবে।
প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ থেকে শুরু করে পরীক্ষার দিন পর্যন্ত টানা ১৫ দিন ২৪ ঘণ্টা করে অফিসে থাকতেও রাজি আছেন বলে জানান আবদুর রশীদ।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি বছর মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তিপরীক্ষা পৃথকভাবে নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে আবদুর রশীদ বলেন, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও এবার পৃথকভাবে পরীক্ষা নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তিনি বলেন, একসঙ্গে পরীক্ষা নেয়ার ফলে ডেন্টাল কলেজ, বিশেষ করে বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক আসন শূন্য থাকায় ডেন্টাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত বিবেচনায় পৃথকভাবে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি ভাবনার মধ্যে রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত বার্ষিক হেলথ বুলেটিন-২০১৫ অনুসারে বর্তমানে দেশে মোট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১০০টি। এরমধ্যে সরকারিভাবে ৩৬টি (৩০টি স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ৬টি বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস দ্বারা পরিচালিত) ও ৬৪টি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এখানে মোট আসন সংখ্যা ৯ হাজার ৬শ ৭৯ (সরকারি ৩ হাজার ৭শ ২৯ ও বেসরকারি ৫হাজার ৯শ ৫০)।
অন্যদিকে সরকারি ৯টি (১টি ডেন্টাল কলেজ ও ৮টি ইউনিট) ও ২৪টি বেসরকারিসহ মোট ডেন্টাল কলেজ/ইউনিটের সংখ্যা ৩৩টি। সরকারি ডেন্টাল কলেজ ও ইউনিটে আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৫শ ১৭ ও ১হাজার ৩শ ১৫।