এবার বেসরকারী খাতের ৩০ লাখ চাকরিজীবীকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ২০১৮ সাল থেকে বেসরকারী খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানকে এর আওতায় এনে পাইলট কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে। রূপকল্প-২১ সামনে রেখে এই কর্মসূচীটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য গঠন করা হচ্ছে ‘পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ’।
সরকারী চাকুরেদের পাশাপাশি বেসরকারী খাতে পেনশন চালুর বিষয়টি নিয়ে এই কর্তৃপক্ষ কাজ করবে। বেসরকারী খাতে পেনশন চালুর বিষয়ে আগামী বাজেটে একটি গাইড লাইন দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারী খাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
জানা গেছে, বেসরকারী খাতে পেনশন চালুর বিষয়টি একেবারে নতুন নয়। দেশের হাতে-গোনা বেসরকারী খাতের কিছু প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা সব প্রতিষ্ঠানে চালু করতে চায় সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। বেসরকারী খাতে পেনশন দেয়া হবে। কিন্তু সরকারের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এতদিন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
এবার সরকারী চাকুরেদের নতুন বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করে অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করছে সরকার। এই বাস্তবতায় বেসরকারী খাতের চাকুরেদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরও পেনশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর ফলে তাদের কর্মদক্ষতা বাড়ার পাশাপাশি হতাশা দূর হয়ে যাবে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে দেশের মাথাপিছু আয় বাড়াতেই হবে। আর তাই বেসরকারী খাতের কর্মকর্তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত একটি সেমিনারে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী একটা অঙ্গীকার ছিল যে, আমরা বেসরকারী খাতেও পেনশন ব্যবস্থা চালু করব। এ বিষয়টি নির্বাচন পরবর্তীকালে দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। এটাকে আবার জাগ্রত করতে হবে। একই সঙ্গে এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে অংশীদার হিসেবে রাখার পরামর্শ রয়েছে অর্থমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী জাতীয় পেনশন স্কিমের আওতায় রয়েছেন। যদি প্রাইভেট সেক্টরকে এই স্কিমের আওতায় আনা হয় তবে এই সংখ্যা ৫০ লাখে দাঁড়াবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এটা বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, বেসরকারী খাতকে পেনশনের আওতায় নিয়ে আসতে অর্থ মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। আগামী বাজেটে এ সংক্রান্ত একটি গাইড লাইন দেয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের কিছু প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সুবিধা দেয়া হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে তা নেই। কিন্তু এই সুবিধা চালু হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, বেসরকারী খাতের চাকুরেদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করবে সরকার। এখন আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টরে প্রায় ৩০ লাখ লোক কর্মরত। অনেকে দীর্ঘকাল যাবত কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু চাকরি শেষে পেনশন বা অবসর ভাতা পাওয়ার কোন আশা তাদের নেই। ইতোমধ্যে বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারী দীর্ঘকাল বেসরকারী খাতে চাকরি করে অবসর নিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের পরিবার দূরে থাক, নিজেরা জীবিতাবস্থায় কোনরূপ পেনশন বা অবসর ভাতা থেকে বঞ্চিত। তাই চাকরি শেষে অনেকটা অসহায় অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। সরকারী চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন, সংশোধন ও সংস্কার করা হয়। ইতোমধ্যে অষ্টম পে-স্কেলে বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। সরকারী চাকরিজীবীরা এর সুফল পাচ্ছেন। কিন্তু প্রাইভেট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা তাদের সহকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ্য করেন। এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে নিজেদের বঞ্চিত হতে দেখে তারা হতাশায় ভোগেন। এ ধরনের হতাশা বোধ তাদের নিজেদের জীবন ও চাকরিজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে জাতীয় উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।
এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই এবার বেসরকারী খাতে পেনশন চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তথ্য উৎসঃ জনকণ্ঠ
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, ০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬