সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো ইনক্রিমেন্ট, আনুতোষিক ও বর্ধিত পেনশন দেয়া হবে না। তবে যাদের চাকরির মেয়াদ গত ১ জুলাই পর্যন্ত ছিল এবং ১ জুলাইয়ের পর পুনরায় চুক্তি করেছেন তারা বেতন পাবেন অষ্টম পে-স্কেলে।
পাশাপাশি চাকরিজীবীদের গ্রস পেনশন নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনলাইনে বেতন নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা না হলে নতুন নিয়োগ, পদোন্নতি ও টাইম স্কেল-সিলেকশন গ্রেডের (১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫) বর্ধিত সুবিধা স্থগিত রাখা হবে।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত পৃথক ৩টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বেতন স্কেল এবং গ্রস পেনশনসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে। অনলাইনে বেতন নির্ধারণ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় অর্থ বিভাগ থেকে। ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে এসব সুবিধা ও বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল না।
# চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ জুলাই বা তার পরে যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারী চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত হবেন তাদের ক্ষেত্রে অবসর গ্রহণের আগে শেষ বেতনটি চুক্তিভিত্তিক বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত বা উভয়ের সম্মতিতে সরকারের সঙ্গে যে বেতনে চুক্তি হয়েছে তা চুক্তিভিত্তিক বেতন হিসেবে নির্ধারিত হবে।
এছাড়া নির্ধারিত বেতন থেকে গ্রস পেনশন এবং বিশেষ অতিরিক্ত পেনশন যদি থাকে তা বাদ যাবে না। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রতি ক্ষেত্রে গুণাগুণ বিবেচনা করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থির করা হবে। সে অনুযায়ী চুক্তিপত্র সম্পাদিত হবে।
প্রজ্ঞাপনের পরিপন্থী পূর্ববর্তী সব আদেশ, স্মারক নির্দেশের সংশ্লিষ্ট সব অংশ বাতিল হবে এবং প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পূর্বের জারি করা স্মারক বহাল থাকবে।
# নতুন নিয়োগ
গত ১ জুলাই বা তারপরে সরকারি চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন বা পাবেন তাদের প্রত্যেকের বাধ্যতামূলক অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। অনলাইনে বেতন নির্ধারণ ছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া চাকরিজীবীর বেতন-ভাতা দেয়া হবে না।
# পদোন্নতি
১ জুলাই বা তারপরে সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি পাওয়ার কারণে তাদের বাধ্যতামূলক অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। অনলাইনে বেতন নির্ধারণ ছাড়া কোনো চাকরিজীবীকে পদোন্নতির কারণে উচ্চতর গ্রেডে বেতন ও ভাতা দেয়া হবে না।
# টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে যারা ১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তাদের সবাইকে প্রতিটি সুবিধার জন্য আলাদা করে বাধ্যতামূলক অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া কোনো চাকরিজীবী এ সময়ে একাধিক সুবিধা পেয়ে থাকলে এর মধ্যে যেটি আগে পেয়েছেন প্রথমে তার জন্য একবার অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি পরবর্তী সুবিধার জন্য আরেকবার নির্ধারণ করতে হবে বেতন। অনলাইনে বেতন নির্ধারণ ছাড়া কোনো চাকরিজীবীকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তির কারণে উচ্চতর গ্রেডে বেতন ও ভাতা দেয়া হবে না।
# অন্য কারণে বেতন গ্রেড বা মূল বেতনের পরিবর্তন
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপযুক্ত ক্ষেত্রগুলো ছাড়া সময়ে সময়ে জারিকৃত সরকারি আদেশ বা অন্য কোনো কারণে বেতন গ্রেড বা মূল বেতন পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বাধ্যতামূলক অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এসব কার্যক্রমের জন্য একটি ওয়েবসাইট শিগগির চালু করা হবে।
এটি চালু না হওয়া পর্যন্ত সরকারের নতুন নিয়োগ, পদোন্নতি এবং ১ জুলাই থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কারণে উচ্চতর গ্রেডে বা একই গ্রেডে উচ্চতর ধাপে বেতন ও ভাতা পরিশোধ বন্ধ থাকবে। তবে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ প্রক্রিয়া শেষ হলে সব প্রাপ্য অতিরিক্ত বেতন যথানিয়মে বকেয়া হিসেবে পাবেন।
এছাড়া যেসব হিসাবরক্ষণ অফিস অনলাইনে বেতন নির্ধারণ ছাড়া এরই মধ্যে পদোন্নতি, টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার কারণে নতুন হারে বেতন নির্ধারণ করেছে এবং নতুন হারে বেতন ও ভাতা পরিশোধ করেছে তাদের ক্ষেত্রেও এ পরিপত্র জারির তারিখ (২৫/০১/২০১৬) থেকে বেতন ভাতা পরিশোধ স্থগিত থাকবে। বেতন নির্ধারণের সব ধাপ অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার পরেই নতুন হারে বেতন ভাতা এবং বকেয়া পরিশোধ করা হবে।