আবারো সারাদেশের প্রধান শিক্ষকবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর আগেও কয়েকবার পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলে শূন্যপদের এবং পদোন্নতি যোগ্য শিক্ষকদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে অধিদপ্তর।
পদোন্নতির লক্ষ্যে আবারো তথ্য চেয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের একটি চিঠি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক এ কে এম সাফায়েত আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারি এবং নবজাতীয়করণকৃত সকল প্রতিষ্ঠানের পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা এবং শূন্যপদের তালিকা অধিদপ্তরের পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে, দীর্ঘদিন পদোন্নতি না দেওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষাডটকমের সঙ্গে আলাপকালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক ও শিক্ষক সমিতির নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আবারো তথ্য চাওয়া সময়ক্ষেপন মাত্র। তিনি এ ঘটনাকে শিক্ষকদের প্রতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘নিষ্ঠুর তামাশা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, অধিদপ্তরের দুর্বল প্রশাসনিক কার্যক্রমের কারণে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন বিভাগীয় পদোন্নতি বন্ধ থাকায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অচল ও বিঘ্নিত হচ্ছে। পদোন্নতি বঞ্চিত সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে গ্রেডেশন তালিকা তৈরিপূর্বক জ্যেষ্ঠতাভিত্তিক শিক্ষকদের দরখাস্ত, পাঁচ বছরের গোপনীয় প্রতিবেদন, নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র, ছবি ইত্যাদি কাগজপত্র অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক ও কুমিল্লার ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার ধান্যদুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আবদুল হক বলেন, কিছুদিন পরপর চিঠি চালাচালি করে অধিদপ্তর। ৭ বছর যাবত পদোন্নতি বন্ধ। ৭ বছরের মধ্যে একজন মাত্র পদোন্নতি পেয়েছেন আদালতের নির্দেশে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে। একই মামলার অপর ৫২ জন বাদীকে এখনও পদোন্নতি দেওয়া হয়নি আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও।
পদোন্নতির জন্য আবারো তথ্য চাওয়াকে হাস্যকর ও সময়ক্ষেপনের হাতিয়ার বলে উল্লেখ করেছেন আবদুল হক।
জানা যায়, দেশের আট হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাই প্রধান শিক্ষকবিহীন স্কুলগুলোতে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এতে শিক্ষা সংক্রান্ত নানা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। এতদিন সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি না দিয়ে বিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয় সরকার। এতে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকরা পদোন্নতি বঞ্চিত হন।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অহেতুক জটিলতার সৃষ্টি করে পদোন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। নিরুপায় হয়ে তারা আদালতে মামলা করেন। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা করায় এখন থেকে এ পদে নিয়োগ দেবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এতে করে বিভাগীয় পদোন্নতির সুযোগও কমে আসছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে তিন ধাপে ২৬ হাজার ১৯৩টি নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়কর করা হয়েছে। এ হিসেবে দেশে ৬৩ হাজার ৮৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পুরনো ৩৭ হাজার ৬৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে আট হাজার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। অর্ধ যুগ ধরে এ পদগুলো শূন্য রয়েছে। তিন বছর আগে দু’ধাপে প্রায় চার শতাধিক প্রধান শিক্ষককে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়।
সদ্য জাতীয়করণকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো করুণ। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২২ হাজার ৯৮১টির অধিকাংশতে প্রধান শিক্ষক থাকলেও তাদের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের অনুরূপ নয়। অনেকের শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্কটও রয়েছে।
জাতীয়করণকৃত স্কুলগুলোর তৃতীয় ধাপের ৯৬০টি বিদ্যালয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। আর দ্বিতীয় ধাপের ২ হাজার ২৫২ স্কুলের গেজেট প্রকাশ নিয়ে চলছে নানা জটিলতা। সবগুলো স্কুলের জাতীয়করণের কাজ শেষ হলে এখানে নতুন জটিলতা ও সমস্যা দেখা দেবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা