জেনে নিন বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষায় কি ধরণের প্রস্তুতি নিবেন!

পরীক্ষার ধাপ :
বাংলাদেশ ব্যাংক সহকারী পরিচালক (জেনারেল) পরীক্ষা ৩ টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
১. এমসিকিউ (১০০ নম্বর)
২. লিখিত পরীক্ষা (২০০ নম্বর)
৩. মৌখিক পরীক্ষা (২৫ নম্বর)

নির্বাচন প্রক্রিয়া :
 এমসিকিউ (১০০ নম্বর) পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া পরবর্তী পরীক্ষার যোগ্যতা নিশ্চিত করে। এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ কাটা যায়।
 লিখিত পরীক্ষা (২০০ নম্বর) এর মধ্যে নির্ধারিত নম্বর পেলে মৌখিক পরীক্ষা জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়।
 মৌখিক পরীক্ষা (২৫ নম্বর) এর মধ্যে পাস নম্বর ১৫।
 মেধাতালিকা নির্ধারণ করা হয় লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের সম্বন্বয়ে।

এমসিকিউ (১০০ নম্বর)
 বাংলা ২০ নম্বর
 ইংরেজী ২০ নম্বর
 গণিত ৩০ নম্বর
 সাধারণ জ্ঞান ২০ নম্বর
 কম্পিউটার ১০ নম্বর
 বিশ্লেষনী দক্ষতা ১০ নম্বর

বাংলা অংশের প্রস্তুতি:
বাংলা অংশে ২ টি ভাগে বিভক্ত। ব্যাকরণ এবং সাহিত্য।
ব্যাকরণ অংশে শব্দ, ধ্বণি, পদ, উপসর্গ, সন্ধি, প্রতিশব্দ, সমাস, কারক, প্রত্যয়, ক্রিয়ার কাল, বাগধারা, পুরুষ, পদক্রম, বাচ্য ও
বাক্য, পারিভাষিক শব্দ ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সাহিত্য অংশে প্রখ্যাত কবি এবং সাহিত্যিকদের রচিত সাহিত্যকর্ম,
জীবনী, সাহিত্যের ধরণ, পুরষ্কার, উৎসর্গিত রচনা ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

ইংরেজী অংশের প্রস্তুতি:
ইংরেজী অংশের প্রস্তুতির জন্য Vocabulary and Grammar এর উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। Sentence & word Correction, Chose the right word, Fill in the blanks, appropriate preposition group verb, idioms & Phrase, Analogy, Synonyms and Antonyms, Sentences, Transformations, literature ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

গণিত অংশের প্রস্তুতি:
নম্বর বৃদ্ধিও জন্য এই অংশের কোন বিকল্প নেই। Number, Percentage, Interest, Ratio, Profit & Loss, Train, Boat & Stream, Partnership, Average, Unitary method, Distance, Age related problems, Pipes & Cisterns, Geometry, Graphs & Charts, LCF & GCF ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

কম্পিউটার অংশের প্রস্তুতি:
Windows, Software, Network, Web, Input & Output Devices, Acronyms, Microsoft office, Virus, Antivirus, language, Database, HTML প্রভৃতি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।

সাধারন জ্ঞান অংশের প্রস্তুতি:
সাধারণত সাম্প্রতিক বিশ্বে ঘটে যাওয়া যে কোন ধরনের বিষয় থেকে প্রশ্ন হতে পারে।

বিশ্লেষনী দক্ষতা অংশের প্রস্তুতি:
এ অংশে সাধারণত Aptitude test, Puzzle, Data Analysis, Critical Reasoning প্রভৃতি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়ে
থাকে।

এমসিকিউ অংশে ভালো করার কিছু পরামর্শ:
 বিগত বছরের বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশ্নগুলো বিস্তরিত এবং নির্ভূলভাবে সমাধান করতে হবে।
 বিগত বছরের বিসিএস, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, সরকারী ও বেসরকারী বানিজ্যক ব্যাংকের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে।
 Vocabulary Stock সমৃদ্ধ করতে হবে।
 ক্যালকুলেটর ব্যতীত গণিত অংশের সমাধান করা উচিত।
 মক্ টেস্ট এর মাধ্যমে সমাধানের গতি বাড়াতে হবে।

লিখিত পরীক্ষা (২০০ নম্বর):
 ইংরেজী সাধারন রচনা। ৩০ নম্বর
 ইংরেজী কম্প্রিহেনশন প্রশ্নোত্তর। ৩০ নম্বর
 ইংরেজী সমসাময়িক/বিশ্লেষণী বিষয়ের রচনা। ৩০ নম্বর
 গণিত সমস্যা সমাধান ৩টি। ৩০ নম্বর
 বাংলা রচনা। ৩০ নম্বর
 অনুবাদ- বাংলা হতে ইংরেজী। ২৫ নম্বর
 অনুবাদ- ইংরেজী হতে বাংলা। ২৫ নম্বর

ইংরেজী সাধারন রচনা: ইংরেজীতে সাধারন রচনা বিষয়ের মধ্যে সাধারনত দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, ব্যবসায়িক নীতি, ব্যাংকিং ব্যবস্থা, অর্থ-বাজার, আমদানি-রপ্তানি, বিশ্ব বাজার ব্যবস্থা, বাজেট, অর্থনৈতিক অবস্থা অথবা সমসাময়িক অর্থনীতি সংক্রান্ত বা সামাজিক সমস্যার কোন বিষয় অন্যতম। ইংরেজী সাধারন রচনায় ভালো নম্বর পেতে হলে:
 গ্রামারের উপর দক্ষতা থাকা জরুরি।
 টু দ্য পয়েন্টে লেখা উচিত। লেখার জন্য সীমিত জায়গা (সর্বোচ্চ ২ পৃষ্ঠা) বরাদ্দ বিধায় অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু লেখা উচিত নয়।
 Numerical Figure এ যত বেশী সম্ভব ব্যবহার করা উচিত।
 সঠিক শব্দ বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
 স্পষ্ট অক্ষরে লেখার চেষ্টা করতে হবে।
 ইকোনোমিক্স বা ফিন্যান্সের টার্মস ব্যবহার করতে হবে।
 ভূমিকা এবং উপসংহার অবশ্যই দেয়া উচিত।
 গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বা অর্থনীতিবিদ এর উক্তি ভালো নম্বরের সহায়ক।

ইংরেজী কম্প্রিহেনশন প্রশ্নোত্তর: ইংরেজী কম্প্রিহেনশন অংশে সাধারণত একটি কম্প্রিহেনশন এবং ৫টি প্রশ্ন থাকে। নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হয়। এক্ষেত্রে ভালো নম্বর পেতে:
 প্যাসেজ পড়ার আগে প্রশ্নগুলোর উপর চোখ বুলিয়ে নেয়া উচিত। এতে করে প্যাসেজের কোন লাইনগুলোর উপর গুরুত্বারাপ করা দরকার তা আগে থেকেই বুঝা যায়।
 দ্রুত ইংরেজী প্যাসেজ পড়ে বুঝে নেয়ার দক্ষতা জরুরি। এজন্য নিয়মিত ইংরেজী পত্রিকা পড়া উচিত।
 লেখার জন্য সীমিত জায়গা বরাদ্দ বিধায় যথাসম্ভব যৈাক্তিক উত্তর দিতে হবে।
 ২-৩ টির বেশী বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয়।
 প্যাসেজের বাইরের কোন তথ্য ব্যবহার করা যাবে না।

ইংরেজী সমসাময়িক/বিশ্লেষণী বিষয়ের রচনা : এ ধরণের রচনাগুলো সাধারণত অর্থনীতি বা সমসাময়িক কোন বিষয়ের সমস্যা সমাধান, মতামত, যুক্তি, বিশ্লেষণী দক্ষতা যাচাই করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১. বর্তমানে খেলাপী ঋণ অনেক বেড়ে গেছে, খেলাপী ঋণ হ্রাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বানিজ্যিক ব্যাংক গুলোর ভূমিকা কি হতে পারে? ২. আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য:
 সাধারণ বাক্য ব্যবহার পরিহার করতে হবে। বিশ্লেষণী বাক্যের উপর জোর দিতে হবে।
 ইংরেজী পত্রিকা ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস এবং ডেইলি স্টার ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদকীয় বিশ্লেষণীয় জ্ঞান ভালো নম্বর পেতে সহায়তা করে
 টু দ্য পয়েন্টে লিখতে হবে।

*** গুরুত্বপূর্ণ।
 ইকোনোমিক্স বা ফিন্যান্সের টার্মস ব্যবহার করতে হবে।
 গ্রামার, বানান এ সকল বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ভাষাশৈলী নম্বরের ক্ষেত্রে অনেক গূরুত্ব বহন করে।
 ভূমিকা, সমস্যা, সামাধানের উপায়, গ্রহণযোগ্যতা, পরামর্শ এবং উপসংহার অবশ্যই দেয়া উচিত।
 গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বা অর্থনীতিবিদ এর উক্তি, তথ্য বহুল ভালো নম্বরের সহায়ক।

ইংরেজীতে ভালো করার কিছু পরামর্শ:
 নিয়মিত ইংরেজী পত্রিকা ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস এবং ডেইলি স্টার পত্রিকার বিজনেস পাতা পড়া উচিত।
 ভোকাবলারি জ্ঞান সমৃদ্ধ থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে বিগত বাংলাদেশ ব্যাংক, বিসিএস, অন্যান্য ব্যাংক ও অন্যান্য চাকুরীর পরীক্ষার প্রশ্নে ভোকাবলারি অংশ ভালো ভাবে জানা থাকলে ভালো।
 ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন ইংরেজীতে হওয়ায় উক্ত পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিলে পরবর্তীতে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।
 সরল বাক্য ব্যবহার করা উচিত।

গণিত সমস্যা সমাধান: নম্বর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ৩টি অংশে পূর্ণ নম্বর খুব সহজেই পাওয়া যায়। লিখিত গণিতের প্রস্তুতি সাধারণত এমসিকিউ প্রস্তুতির সময়েই হয়ে যায়। কিছু বিষয় লক্ষণীয়:
 ক্যালকুলেটর ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে ক্যালকুলেটর ছাড়াই।
 উত্তরপত্রে যথা সম্ভব বিস্তারিতভাবে সমাধান করতে হবে। এজন্য এমসিকিউ প্রস্তুতির সময়ে শর্টকাট উপায়ের পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ উপায়ে সমাধান করার পদ্ধতি জেনে নিতে হবে।
 যেহেতু উত্তরপত্রে জায়গা সংকীর্ণ, সেহেতু কলম দিয়ে লিখার আগে পেন্সিল দিয়ে মিলিয়ে নেয়া ভাল।
 এ অংশে নম্বর কাটার সুযোগ নেই, বরং অন্য অংশের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গণিত খুব সহায়ক।
 বিগত বাংলাদেশ ব্যাংক, বিসিএস, অন্যান্য ব্যাংক ও অন্যান্য চাকুরীর পরীক্ষার প্রশ্নে গণিত অংশ সম্পূর্ণরুপে সমাধান করতে হবে।

বাংলা রচনা : বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হলেও লেখার মানের প্রতি গুরুত্বারোপ করা জরুরি। ইংরেজী রচনার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বাংলার জন্যও প্রযোজ্য। বাংলায় রচনায় ভালো নম্বর পেতে হলে:
 যৌগিক বাক্য প্রয়োগ করা উচিত।
 নির্ভুল শব্দ, তথ্যবহুল এবং পূর্ণাঙ্গ বাক্য ব্যবহার করতে হবে।
 ভূমিকা, বিশ্লেষণ, প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা, পরামর্শ, যৌক্তিকতা, উপসংহার থাকা জরুরি।
যথা সম্ভব গুছিয়ে লিখা উচিত। এক্ষেত্রে শুরুর দিকে বেশী গুরুত্বারোপ করা উচিত।

অনুবাদ: অনুবাদগুলো যেকোন বিষয়ের উপর হতে পারে। অনুবাদগুলোর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যপার হচ্ছে এগুলো নম্বর কমিয়ে দিতে খূব সহায়ক। অনুবাদ করার ক্ষেত্রে ভাবগত এবং আক্ষরিক বিষয়টি বোঝা জরুরি। আক্ষরিক অনুবাদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শব্দের প্রতিস্থাপন বোঝায়। ভাবগত অনুবাদ হচ্ছে সঠিক মূলবক্ত্যবের দিকে খেয়াল রেখে সঠিক শব্দের ব্যবহার। ভাবগত না হলে অনুবাদের সৌন্দর্য ফোটানো কঠিন। অনুবাদের প্রশ্নে সাধারণত বাংলা এবং ইংরেজী বাক্যগুলো সাধু ভাষার/অনেক কঠিন শব্দের দীর্ঘ জটিল এবং যৌগিক ধরনের হয়ে থাকে।
সাধু ভাষা হলে তা কল্পনায় চলিত ভাষায় অনুবাদ করে নিতে হবে।
কঠিন শব্দের অর্থ জানা না থাকলে পুরো বাক্যটি পড়ে সমমানের কোন অর্থে অনুবাদ করতে হবে।
বাক্য অনেক দীর্ঘ, জটিল বা যৌগিক হলে অনুবাদের জন্য সরল ভাষায় ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে অনুবাদ করতে হবে।
পুরোটা অনুবাদ করা খুব জরুরি। আংশিক অনুবাদ কোন নম্বরও পেতে সহায়তা করে না।

বাংলা অংশে ভালো করার কিছু পরামর্শ:
যৌগিক এবং জটিল বাক্যের উপর জোর দিতে হবে।
নিয়মিত বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয়, অর্থনীতি এবং আর্ন্তজাতিক অংশ ভালোভাবে পড়া জরুরি।
বাংলা বানান এ ভুল অনেক বেশী হয়। বাংলা পত্রিকা এবং বই পড়ার সময় মনোযোগ সহকারে বানান খেয়াল করতে হবে।
বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ লিখিতভাবে সমাধান করতে হবে।
ভাষাশৈলী নম্বরের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব বহন করে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক মো: বিপ্লব তরফদার এবং ফারুক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাবের ‘বাংলাদেশ ব্যাংক রিক্রুটমেন্ট : ইনস অ্যান্ড আউটস’ প্রোগ্রামের জন্য লেখাটি তৈরি করেছেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব থেকে পাঠকদের জন্য লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে।