ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে মার্চ মাসের ২য় সপ্তাহে নতুন বেতন স্কেলের সুবিধা হাতে পাচ্ছেন প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী। সরকারের উচ্চ মহলের একাধিক সূত্র আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ খবর নিশ্চিত করেছে ।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এতদিন কেউ খোঁজ নেয়নি, সময়মতো অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেয়নি। সঠিক জায়গায় তদবির করেননি কেউ। দৈনিকশিক্ষায় খবর প্রকাশের পর টনক নড়েছে, এবার উদ্যোগী হয়েছেন, আশাকরি মার্চে হাতে নগদ পাচ্ছেন এমপিও শিক্ষকেরা।’
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, কয়েকসপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে বকেয়া বেতন পেতে শিক্ষকদের বিলম্বের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও অবহেলাকে দায়ী করেছেন সাধারণ শিক্ষকরা। সরকারের কাছ থেকে সুবিধাভোগী শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধেও দৈনিকশিক্ষার মন্তব্য কলামে উচ্চকন্ঠ শিক্ষকরা।
বেসরকারি সাধারণ শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরকারি স্কুল ও কলেজ শিক্ষক তাই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা নিয়ে কোনও মাথাব্যাথা নেই তাদের।
ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, সুবিধাভোগী শিক্ষক নেতারা চুপচাপ রয়েছেন। সুখবর পাওয়া মাত্র বিবৃতি দিয়ে বাহবা নিবেন। ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সহকারি অধ্যাপক শফিকুল কবির জানান, সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেওয়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নেতা কাজী ফারুক বিদেশীদের টাকায় একটি এনজিও খুলে বসেছেন। অপর দুই নেতা সরকারের সুবিধা পেয়ে সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষে কোনও কাজও করছেন না, আন্দোলনও করছেন না। শুধু সুবিধামতো বিবৃতি দিচ্ছেন।
শফিকুল কবির বলেন, বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছিন দাখিল পরীক্ষা শুরুর একদিন আগে (৩০ জানুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রীকে ঢাকায় সংবর্ধনা দিবেন। প্রতিটি দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে চারজন শিক্ষক ও চার হাজার টাকা নিয়ে মহাসমাবেশে হাজির হওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এ নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক টেলিফোন ও ইমেইলে অভিযোগ করেছেন।
গত ১ জুলাই থেকেই নতুন স্কেলে পাবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন প্রজ্ঞাপনে শিক্ষরা খুশী হলেও বর্ধিত বকেয়া বেতন কবে নাগাদ হাতে আসবে তা জানতে উদগ্রীব।
নতুন পে-স্কেলে গত বছরের ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বকেয়া বেতন বাবদ ২ হাজার ৪৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বেতনভাতা বাবদ ২ হাজার ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৪ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি এ প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, গত ১৫ ডিসেম্বর সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপনের বাইরে রাখা হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতনের বিষয়টি। পরবর্তী সময়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অষ্টম বেতন স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা