জেনে নিন শেষ সময়ে এসে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়!

আগামী ৮ জানুয়ারি ৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার শেষ সময়ে এসে কী ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, অভিজ্ঞতা থেকে সে কথাই জানাচ্ছেন ৩০তম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকারী সুশান্ত পাল

 

আর ঠিক ১৩ দিন পরই ৩৬তম প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে একটু টেনশন করাটা একটা সাধারণ ভদ্রতা, আর ওটা করতেও তো তিন দিন লাগে, সে হিসাবে প্রিলির বাকি আর ১০ দিন! এই ১০ দিনে কী কী করা যায়?
০১. আবেগ কমান, সাধারণ জ্ঞান পড়া কমান। বিসিএস সাধারণ জ্ঞান পাণ্ডিত্যের খেলা নয়।
০২. আগে কী পড়েছেন, কিংবা পড়েননি, সেটা ভুলে যান। বেশি পড়লেই যেমন প্রিলি পাস করা যাবেই, এমন কিছু নেই; তেমনি কম পড়লেই যে প্রিলি ফেল করবেনই, তেমন কিছু নেই।

ffffff
০৩. সামনের ১০ দিনে গুনে গুনে অন্তত ১৬০ ঘণ্টা ঠিকভাবে পড়াশোনা করবেন, এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখুন। এটা করতে পারলে আগে কোনো কিছু না পড়লেও প্রিলি পাস করে যাবে।
০৪. ১০ দিনে বাসায় ৫০ সেট মডেল টেস্ট দেবেন।
০৫. ভালো একটা প্রিলি ডাইজেস্ট আর বিভিন্ন প্রিলি স্পেশাল সংখ্যা সমাধান করুন। প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর দুটি জব সল্যুশন রিভিশন দিন।


আপনি যদি ৩৬তম বিসিএস পরীক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সুখবর!


০৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হবেন না। এই ১০ দিন মোবাইল ফোন, টিভি, ফেসবুক, ইমো, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকলে আপনার জীবন বৃথা হয়ে যাবে না।

০৭. সংবিধান, রাজধানী ও মুদ্রা, শাখানদী ও উপনদী, প্রকৃতি ও প্রত্যয়সহ কিছু ঝামেলাযুক্ত টপিক আছে, যেগুলো মনে রাখতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, অথচ মার্কস পাওয়া যায় ১-২। কী দরকার? সময়টা অন্য দিকে দিন, বেশি মার্কস আসবে।
০৮. সব ধরনের রেফারেন্স বই থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। অত সময় নেই।
০৯. বেশি বেশি প্রশ্ন পড়ুন, আলোচনা অংশটা কম পড়বেন।
১০. এই ১০ দিনে পেপার পড়ার আর খবর শোনার কোনো দরকার নেই।
১১. মানসিক দক্ষতা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন—এ দুটি বিষয়ের কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তর করবেন না। সাধারণ জ্ঞান থেকে অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন।
১২. যা কিছু বারবার পড়লেও মনে থাকে না, তা কিছু পড়ার দরকার নেই।
১৩. কে কী পড়ছে, সে খবর নেওয়ার দরকার নেই। যাঁদের প্রস্তুতি অনেক ভালো, তাঁদের সঙ্গে এই ১০ দিনে প্রিলি নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।
১৪. বিজ্ঞানটা শুধু প্রিলির প্রশ্নব্যাংক আর জব সল্যুশন থেকে পড়ুন।
১৫. পাটিগণিত বাদে গাণিতিক যুক্তির বাকিগুলো প্র্যাকটিস করুন।
১৬. বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের জন্য শুধু সরকারি চাকরির প্রশ্নগুলো পড়ুন।
১৭. বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকরণ আগে যা পড়েছেন, শুধু সেইটুকুই আরও একবার পড়ে নিন।
১৮. ডিসেম্বর বাদে গত ৫ মাসের সাধারণ জ্ঞানের তথ্যগুলো কোনো একটি গাইড/বই থেকে এক নজর দেখে নিন।
১৯. ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মাধ্যমিকের সামাজিক বিজ্ঞান বইটি থেকে দেখতে পারেন।
২০. যে প্রশ্নগুলোর উত্তর অনেক দিন ধরেই পাচ্ছেন না, সেগুলো নিয়ে ভাবা বন্ধ করে দিন।
এখন ৭ তারিখ বিকেল থেকে শুরু করে ৮ তারিখ পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়া পর্যন্ত কী কী করতে পারেন, বলছি।
২১. থ্রি ইডিয়টস টাইপের কোনো একটা মুভি দেখুন। কিছু সফট ইন্সট্রুমেন্ট কিংবা রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পারেন।
২২. পুরোপুরিই মোবাইল ফোন আর ফেসবুক মুক্ত সময় কাটান।
২৩. পরদিনের জন্য পরীক্ষার হলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখুন।
২৪. রাতে হালকা খাবার খেয়ে ১০টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ুন। প্রিলির আগের রাতে ভালো ঘুম না হলে যতই প্রস্তুতি থাক না কেন, পরীক্ষা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন।
২৫. পরীক্ষার দিন সকালে উঠে ১৫ মিনিট প্রার্থনা করুন। এরপর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাশতা করে হাতে ‘সময় নিয়ে’ (কোনোভাবেই ‘বইপত্র নিয়ে’ নয়) হলের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ুন। বের হওয়ার আগে আরও একবার দেখে নিন, প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়েছেন কি না।
২৬. পরীক্ষার হলে যে ভাবনাটা সবচেয়ে বেশি ম্যাজিকের মতো কাজ করে, সেটি হলো ‘আই অ্যাম দ্য বেস্ট’ ভাবনা। আপনার চেয়ে ভালো পরীক্ষা কেউই দিচ্ছে না, এটা বিশ্বাস করে পরীক্ষা দিন।
২৭. উত্তরপত্রে সেট কোডসহ অন্যান্য তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করুন। এটা ভুল হলে সব শেষ।
২৮. সব প্রশ্নই উত্তর করার জন্য নয়। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস।
২৯. বুদ্ধিশুদ্ধি করে কিছু প্রশ্ন ছেড়ে না এসে উত্তর করতে হয়। এ রকম ৬টা প্রশ্ন ছেড়ে শূন্য পাওয়ার চেয়ে অর্ধেক ঠিক করে ১ দশমিক ৫ পাওয়া ভালো।
৩০. সাধারণত যেকোনো বিষয় নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবার সময় আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। প্রথম দেখায় যে প্রশ্নগুলোর উত্তর পারেন না মনে হবে, সেগুলো মার্ক করে পরেরটায় চলে যাবেন। সময় নষ্ট করার সময় নেই।
৩১. প্রশ্ন ভুল কি ঠিক, সেটা নিয়ে মাথা খারাপ করবেন না।
৩২. বৃত্ত ভরাট করতে করতে ক্লান্ত? একটু ব্রেক নিন। চাকরিটা পেয়ে গেলে আপনার জীবনটা কীভাবে
বদলে যাবে, কাছের মানুষগুলোর হাসিখুশি মুখ একবার কল্পনায় আনুন; ক্লান্তি কেটে যাবে।
৩৩. কয়টা দাগালে পাস, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি যেগুলো পারেন, সেগুলোর উত্তর করবেন। এরপর যেগুলো একেবারেই পারেন না, সেগুলো বাদ দিয়ে বাকিগুলোর ৬০ শতাংশ উত্তর করবেন।
৩৪. কোনো প্রশ্নেই বেশি গুরুত্ব দেবেন না। সব প্রশ্নেই ১ নম্বর।
৩৫. আপনার আশপাশে কে কয়টা দাগাচ্ছে, কোনটি দাগাচ্ছে, সেদিকে তাকাবেন না। এতে আপনি বেশ কিছু জানা প্রশ্ন ভুল দাগাতে পারেন।
৩৬. প্রতিদিন শিখি থেকে কিছু পোস্ট একবার করে দেখে নিতে পারেন।
৩৭. পরিচয় দেওয়ার মতো একটা চাকরি সবারই হোক। সিভিল সার্ভিসে আপনাদের স্বাগত জানাই।