জন্মের পর একটি শিশুর নাম রাখা নিয়ে কৌতুহলের শেষ থাকে না। বাবায় যদি উমুক রাখেন মা রাখেন তমুক। আর দাদা দাদী সুযোগ পেলে তো কথায় নেই! ঠিক এ ভাবেই নতুন জন্ম নেওয়া শিশুটির নির্দিষ্ট একটি নাম রাখা হয়। নতুন সৃষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের নাম করণও একই রকম প্রক্রিয়ায় করা হয়। কিন্তু ঠিক কিভাবে এসেছিল অ্যাপল, গুগল, ইয়াহু ও ফেসবুক সহ বিশ্ববিখ্যাত সব প্রতিষ্টানের নাম। চলুন ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে রহস্য উদঘাটন করি।
অ্যাপল কম্পিউটার
নিজের কোম্পানির নাম কী হবে তা নিয়ে স্টিভ জবসের মাথা ব্যাথার শেষ ছিল না। তিন মাস ধরেই তিনি কোম্পানির নাম খুঁজছিলেন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের প্রিয় ফল আপেল। বিরক্ত জবস একদিন তার সহকর্মীদের বলেন, বিকাল পাঁচটার মধ্যে আরও ভালো কোনো নাম দিতে না পারলে তার কোম্পানির নাম হবে অ্যাপল কম্পিউটার। এবং শেষ পর্যন্ত তাই হলো।
গুগল
অনেকটা কৌতুকের ছলেই গুগল সার্চ ইঞ্জিনের নামকরণ করা হয়েছিল, কিন্তু সেই কৌতুকই আজ সত্য হয়ে গেছে! গুগল (Google) নামটি এসেছে গুগোল (Googol) শব্দ থেকে। ১-এর পরে ১০০টি শূণ্য লাগালে যে সংখ্যাটি হয় তাকে বলে গুগল। স্ট্যানফোর্ড-এর দুই ছাত্র সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ তাদের লগ্নিকারীকে মজা করেই বুঝিয়েছিল তাদের এই ওয়েব ইঞ্জিনে গুগলে একদিন গুগোল সম পরিমাপের তথ্য আদান-প্রদান হবে। লগ্নিকারীও চেকটি ইস্যু করেছিলেন গুগলের নামে। আজ সত্যিই গুগলে গুগোল পরিমাণ তথ্য আদান প্রদান করা হয়। যাই জানতে চান আপনি স্রেফ গুগলে গিয়ে কয়েকটি শব্দ বা একটি শব্দ লিখলেও পেয়ে যেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত তথ্যাদি।
ফেসবুক
মার্ক জাকারবার্গ, হার্ভার্ড এ তার ২য় বর্ষ চলাকালীন সময়ে, অক্টোবর ২৮, ২০০৩ এ ফেসবুকের পূর্বসূরি সাইট ফেসম্যাস তৈরী করে। সুতরাং পূর্বে এর নাম ছিল ফেসম্যাস। এতে তিনি হার্ভার্ডের ৯ টি হাউস এর শিক্ষার্থীদের ছবি ব্যাবহার করেন। তিনি দুইটি করে ছবি পাশাপাশি দেখান এবং হার্ভার্ডের সব শিক্ষারথিদের ভোট দিতে বলেন। কোন ছবিটি হট আর কোনটি হট নয়। ‘হট অর নট’। ফেসম্যাস সাইট এ মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অন লাইন এর মাধ্যমে ভোট দেন। ২০০৪ ফেসম্যাস হতে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ এর জানুয়ারিতে মার্ক তার নতুন সাইট এর কোড লেখা শুরু করেন এবং ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ডের ডরমিটরিতে দি ফেসবুক. কম নামে নতুন সাইট চালু করেন। ২০০৫ সালের আগস্টে ‘দ্য ফেসবুক ডটকম’ নাম পাল্টে কোম্পানির নাম রাখা হয় শুধু ‘ফেসবুক’।
ইয়াহু
গুগলের মতো আরেকটি জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ইয়াহু। জোনাথন সুইফট তার বিখ্যাত গ্রন্থ গালিভার ট্রাভেলস-এ ইয়াহু শব্দটি ব্যবহার করেন। ইয়াহু বলতে এমন লোকদের বোঝায় যে ব্যবহারে ও চালচলনে অনেকটা অমানুষিক। ইয়াহুর প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াঙ ও ডেভিড ফিলো নিজেদেরকে ইয়াহু মনে করতেন! ইয়াহু আজ সত্যিই বিশ্বব্যাপী অমানুষিক আকারের তথ্য আদান প্রদান করছে।
হটমেইল
গুগলের জিমেইল, ইয়াহুর ইমেইলের মতো হটমেইলও বিনা পয়সায় মেইল আদান প্রদানের অন্যতম সেরা ইঞ্জিন। প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক স্মিথের মাথায় প্রথম ওয়েবের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসে ই-মেইল আদান-প্রদানের ভাবনাটি আসে। এই ইলেকট্রনিক মেইল সার্ভিসের বাণিজ্যিক প্রকল্প নিয়ে সাবের ভাটিয়া তার কাছে আসেন। মেইলের আগে-পিছে বহু নাম জুড়ে অবশেষে তারা হটমেইল নামটিতে সন্তুষ্ট হন। কারণ এই নামের মধ্যে html শব্দগুলো আছে। আর html হলো ওয়েব পেজ লেখার প্রধান প্রোগ্রাম। শুরুতে হটমেইল লেখা হতো ছোট-বড় অক্ষর মিলিয়ে ঠিক এভাবে HoTMaiL।
এইচপি
কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার ইত্যাদির জগতে এইচপি ব্র্যান্ডের যথেষ্ট নাম ডাক। এই নাম নিয়ে কিন্তু কোম্পানির দুই মালিকের মধ্যে বেশ দর কষাকষি হয়েছিল। অবশেষে বিল হিউলেট ও ডেভ প্যাকার্ড তাদের কোম্পানির নামে কার নামটি আগে বসবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে কয়েন দিয়ে টস করেন। টসের ফলাফল হিসেবেই কোম্পানির নাম হয় হিউলেট-প্যাকার্ড, সংক্ষেপে এইচপি।
মাইক্রোসফট
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কম্পিউটার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট আসলে মাইক্রোকম্পিউটার সফটওয়্যারের সংক্ষিপ্ত রূপ। বিল গেটস শুরুতে তার কোম্পানির নাম ‘মাইক্রো-সফট’ লিখলেও পরে মাঝখানের ড্যাশটি বাদ দেন।
লোটাস
লোটাস মানে পদ্ম। মিচ কাপুর তার প্রিয় পদ্মাসন থেকে নিজের কোম্পানির এই নামকরণ করেন। উল্লেখ্য, তিনি মহির্ষি মহেশ যোগীর শিষ্য ছিলেন।
ইন্টেল
কম্পিউটার কিনলে বা খুলতে গেলেই অধিকাংশ ডেস্কটপে ইন্টেলের নাম দেখা যায়। সবার মতোই নিজেদের নামেই এই সফটওয়্যার কোম্পানির নামকরণ হওয়ার কথা ছিল । সেই অনুযায়ী বব নোয়েস ও গর্ডন মুর চেয়েছিলেন তাদের কোম্পানির নাম হওয়ার কথা মুর নোয়েস। কিন্তু এই নামে ইতোমধ্যেই একটা বড় হোটেল কোম্পানি থাকায় তারা নিজের নাম বাদ দিয়ে উৎপাদিত পণ্য অনুযায়ী নামকরণ করেন। INTegrated ELectronics-এর সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবেই ইন্টেল নামকরণ করা হয়।