সদ্য প্রকাশিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলে অসন্তুষ্টি জানিয়ে পুনরায় খাতা দেখার চ্যালেঞ্জ করেছেন প্রায় ৬৪ হাজার শিক্ষার্থী।
৬৪ হাজার আবেদনকারী মোট ১ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৩টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছেন।
যা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪%। জেএসসি পরীক্ষার মতো অপ্রাসঙ্গিক সমাপনীতে এতো সংখ্যক শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জকে ভাবনার বিষয় বলছেন শিক্ষাবিদরা।
তারা বলছেন, জেএসসিতে পাসের হার ছিল ৯৪% বেশি। এরপর কেন এত সংখ্যক শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন তা আসলেই চিন্তার বিষয়।
তাদের মতে, খুব দ্রুত বেশি সংখ্যক খাতা দেখায় অথবা সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা খাতা পুনরায় দেখার চ্যালেঞ্জ করছেন।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট মতো জেএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। কারণ, নবম শ্রেণীতে ভর্তি ছাড়া বাকি জীবনের তেমন প্রয়োজন নেই বললেই চলে এই পরীক্ষার রেজাল্ট। তারপর কেন এত সংখ্যক পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ করেছে তা ভাবনা বিষয়।
শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আগের চেয়ে এখন অধিক সচেতন ও যত্নশীল বা খাতা মূল্যায়ন কাঠামোতে তাদের আপত্তি থাকায় এত সংখ্যক আবেদন পড়েছে বলে মত তাদের।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি জানায়, জেএসসিতে এত সংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণ করার এটাই রেকর্ড। এর আগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। কিন্তু জেএসসি মতো পরীক্ষায় কেন এত সংখ্যক শিক্ষার্থী পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছে, তা ভাবনার বিষয়।
বোর্ডে তথ্যমতে, গেলো বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৪ জনের মধ্যে ফল চ্যালেঞ্জের আবেদন করে ১ লাখ ২৯ হাজার ৩০১ শিক্ষার্থী।
অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ করা মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৯%। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এসএসসিতে এত সংখ্যক আবেদন গ্রহণযোগ্য। কিন্তু জেএসসিতে কেন এতো আবেদন পড়েছে তা তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। খাতার দেখাতে কোনো অসঙ্গতি আছে কি এমন প্রশ্নে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, খাতার দেখাতে কোনো অসঙ্গিত থাকার কথা নয়। সাধারণত খুব কম সময়ে প্রচুর খাতা দেখার কারণে নানা ভুলত্রুটি হয় পরীক্ষকদের। এটা খুবই কম। তারপর কেউ যদি খাতা পুনরায় দেখতে চায় সে ব্যবস্থা আছে।
গত ৩১শে ডিসেম্বর ফল জেএসসি-জেডিসি ফল প্রকাশ করা হয়। পরদিন থেকে ৭ই জানুয়ারি পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষার আবেদন নেয়া হয়।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির তথ্যমতে, সারা দেশে ৬৩ হাজার ৯৮৭ ছাত্রছাত্রী উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছে। আর জেএসসি ও জেডিসি মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৭২ হাজার ২৮৯ জন। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৮১% শিক্ষার্থী ফল নিয়ে অসন্তোষ্ট প্রকাশ করেছে।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক জেএসসিতে এত সংখ্যক শিক্ষার্থী ফল পুনঃমূল্যায়নের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সবাই এখন ভালো ফল করতে চায়। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি অতি যত্নশীল। ৮ বছর পড়াশোনা করানোর কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাবক কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়া তারা পুনরায় আবেদন করেছেন। আর আবেদন করে ফল পরিবর্তন হয় এরকম যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে।
বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, অকৃতকার্য বা কাঙিক্ষত ফল পায়নি এরাই মূলত পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘটে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও যে বিষয়ে এ-প্লাস আসেনি সে বিষয়ে পুনরায় চ্যালেঞ্জ করা। খাতা পুনঃনিরীক্ষায় মোট চারটি দিক দেখা হয়, সেগুলো হচ্ছে সব কটি উত্তরে নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে (কম্পিউটারে ফল প্রণয়নে পাঠযোগ্য ফরম) উত্তোলনে ভুল হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। উল্লেখ্য, আগামী ৩০শে জানুয়ারি ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা