সময়ের সেরা চাহিদা সম্পন্ন পেশা গুলো কি ? দেখে নিন

সুমনা শারমিন:বর্তমানে তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন নতুন পেশায় যুক্ত হচ্ছে। নতুন বছরকে সামনে রেখে অনেকেই চাকরি পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছেন। বিশ্বব্যাপী নিজেকে এগিয়ে রাখার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে না চাইলে ক্যারিয়ার বিল্ডার ও ইকোনোমিক মডেলিং স্পেশালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল (ইএমএসআই) এর প্রকাশ করা সময়োপযোগী বিভিন্ন চাকরি থেকে নিজেরটি বেছে নিন।

সফটওয়্যার ডেভেলপার
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। প্রায় সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেরই বর্তমানে ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইট তৈরির কাজটি করে থাকেন একজন ওয়েব ডেভেলপার। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এই কাজের চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এ ছাড়াও রয়েছে সফটওয়্যার ও অ্যাপ ডেভেলপারের চাহিদা। বর্তমানে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ায় সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাহিদা বাড়ছে। স্মার্টফোনে সহজেই যেকোনো কাজ সারা যাচ্ছে অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে। আর এ জন্যই মোবাইল অ্যাপের চাহিদা বাড়ায় অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদাও বাড়ছে। একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সচল রাখতে সিস্টেম অ্যাডমিন কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কাজের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরি করে থাকে। আর তাই আনুপাতিক হারে এই পেশার চাহিদা বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই বাড়ছে সাইবার আক্রমণ। গত বছর বিশ্বের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছিল। ২০১৬ সালে সাইবার আক্রমণের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান এ বছর নিজেদের তথ্যের নিরাপত্তায় সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি।

ইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্য
পছন্দের পেশা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টির জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আগ্রহী মানুষের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এখনকার তরুণদের কাছেও ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল একইরকম আকর্ষণীয় পেশা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি বর্তমানে স্থাপত্য বা আর্কিটেক্টও তরুণদের পছন্দের তালিকার শুরুর দিকেই স্থান করে নিয়েছে। বর্তমানে শিল্পনির্ভরতা বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে শিল্পকারখানা। আর এর ফলে দরকার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জনশক্তির। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার। শিল্পকারখানার বাইরেও এই পেশায় দক্ষ লোকদের কাজের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে প্রায় ১৮ হাজার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পদ ফাঁকা থাকে যোগ্য কর্মী না পাওয়ার কারণে।

চিকিৎসা ও নার্সিং
চিকিৎসাসংক্রান্ত পেশা সারা বিশ্বেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক পেশা। আমরা যারা বিভিন্ন ধরনের দাফতরিক কাজে নিয়োজিত, তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই কোনো না কোনো সময়ে হাড়, সন্ধি কিংবা পেশির সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। আর এসব সমস্যায় অকুপেশনাল থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হতে হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। এ জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টদের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এর পাশাপাশি রেজিস্টার্ড নার্সদেরও চাহিদা বাড়ছে বর্তমান বিশ্বে। ২০১৬ সালে এ পেশাটিও থাকবে চাহিদার শীর্ষে।
চিকিৎসা খাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নাম ফার্মাসিস্ট। বিভিন্ন রোগীর রোগ অনুপাতে ওষুধ নির্ধারণ এবং রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশেও এ পেশার গুরুত্ব বাড়ছে।

সেলস ও মার্কেটিং
পণ্যের বিক্রির প্রসার ঘটাতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন তৈরি কিংবা উৎপাদিত পণ্যের ক্যাম্পেইন করা এবং দেখভাল করেন এখন মার্কেটিং ম্যানেজার। একজন মার্কেটিং ম্যানেজার কোনো একটি পণ্যের জন্যও কাজ করতে পারেন কিংবা একই ধরনের একাধিক পণ্যের বিক্রয় বাড়াতে কাজ করতে পারেন। একটি প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে মার্কেটিং ম্যানেজার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকেন। একজন মার্কেটিং ম্যানেজার গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৬০-৬৫ ডলার পর্যন্ত আয় করে থাকেন।
এই সময়ের চ্যালেঞ্জিং অথচ সম্ভাবনাময় একটি খাত হলো সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং। যারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং উপযুক্ত স্থান। পণ্য বাজারজাত করতে প্রচুর সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং কর্মীর প্রয়োজন। যদিও এক সময় সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং একই ডিপার্টমেন্ট ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেলস ও মার্কেটিং আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট ধরা হয়। বিশ্বে যত ধরনের পণ্য রয়েছে, তার সবগুলোর জন্যই দরকার এই দুই বিভাগ। দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশী অনেক কোম্পানিও বাংলাদেশে তাদের পণ্য বাজারজাত করছে। ফলে বাড়ছে এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান। তাই এসব বিভাগে প্রচুর দক্ষ লোকবল প্রয়োজন হচ্ছে।

অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অডিটর
প্রতিষ্ঠান যে ধরনেরই হোক না কেন, আর্থিক বিষয়াদি সেখানে থাকবেই। আর অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ করার জন্য প্রয়োজন একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা অডিটর। ক্যারিয়ার বিল্ডার্সের তথ্যানুসারে, প্রতি মাসে প্রায় ২৮ হাজার অ্যাকাউন্ট্যান্টের পদ ফাঁকা থাকে যোগ্য কর্মীর অভাবে।

হিউম্যান রিসোর্স
একটি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে তাদের নিয়মিত তদারকি এবং দক্ষতা উন্নয়নের কাজটি করে থাকেন মানবসম্পদ বিভাগের কর্মীরা। একটি প্রতিষ্ঠান কতটা সফল হবে, তার প্রায় পুরোটাই দক্ষ কর্মীর ওপর নির্ভর করে। ফলে মানবসম্পদ বিভাগের দক্ষ কর্মীদের চাহিদা অনেক।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ম্যানেজার
বর্তমানে চাকরির বাজারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর। সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করা তরুণ-তরুণীদের পছন্দের প্রথম কাতারে রয়েছে এই পেশা। কারণ এই পেশাটিকে সবাই চিন্তামুক্ত একটি পেশা হিসেবেই মনে করেন এবং এর ভবিষ্যৎও অনেক ভালো। ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই খাতে ক্যারিয়ারকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করা হয়। ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক প্রাইভেট ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই পেশায় তরুণদের সুযোগ অনেক বাড়ছে। ব্যাংকিং সেক্টরে কাজের ভালো পরিবেশের সাথে রয়েছে ভালো বেতনকাঠামো। তাই এই পেশার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে বর্তমানে আগ্রহী হয়ে উঠছে তরুণেরা। একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা তদারকি, বিনিয়োগ কিংবা অর্থসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে লাভবান রাখার কাজটি করে থাকেন ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজার। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে এই পদে দক্ষ কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর সঙ্কট প্রবল।

টেলিকম
প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে বাড়ছে টেলিফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। বিশেষ করে ইন্টারনেটকে হাতের মুঠোয় এনে দিতে টেলিকম খাতের প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর এ জন্য এই খাতকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে দক্ষ কর্মীবাহিনী। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে এ খাতকেই বেছে নিচ্ছেন তরুণেরা। এই খাতে ক্যারিয়ার গড়লে একজন কর্মী দেশে ও বিদেশে চাকরির সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া টেলিকম খাতে বেতন ও কাজের পরিবেশও ভালো।

সূত্র: নয়াদিগন্ত