সফল ব্যক্তিরা আকাশ থেকে পড়েন না। তাঁরা আমাদের মতোই আমাদের আশপাশ থেকে নিজের প্রচেষ্টায় বড় হন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যকে বশীভূত করেন তাঁরা। যার যার কাজের ক্ষেত্রে আমরা সবাই সফলতা চাই। কিন্তু কীভাবে সফল হবেন সেটা হয়তো অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। সফল হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সূত্র নেই। প্রত্যেকে নিজের মতো করে সাফল্য লাভ করেন। তবে ক্যারিয়ার-বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্যারিয়ার এডিক্ট ডটকম জানিয়েছে সফল মানুষ ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ সফলতার মুখ দেখেন। নিচের লেখাটি পড়লেই বুঝতে পারবেন সফল হওয়ার কোনো দ্রুত ও সহজ পন্থা নেই।
১. বারবার ব্যর্থ হওয়া
হ্যাঁ। আমরা শুধু সাফল্য দেখি কিন্তু এর পেছনে ব্যর্থতার বহর সম্পর্কে আমরা জানি না। বেশির ভাগ সফল মানুষই জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন, তারপর সাফল্য পেয়েছেন। তাই ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যদি ব্যর্থতার রসদ না থাকে তাহলে আপনি হয়তো কিছুটা পিছিয়েই রয়েছেন।
২. ভুল সিদ্ধান্ত
সফল ব্যক্তিরা ভুল থেকে শেখেন। তাই তাঁদের জীবনে ভুল সিদ্ধান্তের পরিমাণও বেশি থাকে। দেখা যায় ১০টা সিদ্ধান্তের মধ্যে গড়ে ৮টা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাঁরা। তবে এই ভুলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে কারণ তাঁরা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শেখেন।
৩. পাহাড় ঠেলা
বাংলায় এই কথাটা বেশ প্রচলিত। পাহাড় ঠেলা মানে প্রায় অসম্ভব কাজের পেছনে লেগে থাকা। অনেকেই বলবেন, সময় নষ্ট করছেন কিন্তু সফল লোকদের এই কাজটা খুব প্রিয়। তাঁরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে ভালোবাসেন। আর সে কারণেই দুনিয়ায় প্রতিদিন নতুন নতুন আবিষ্কার হচ্ছে, যা মানুষের জীবনকে আগের চেয়ে আরো সহজ করে দিয়েছে।
৪. নাছোড়বান্দা
কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে সাফল্য পেয়েছেন এমন কাউকে দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোনো নির্দিষ্ট কাজের পেছনে তাঁরা আঠার মতো লেগে থাকেন এবং সেটা ৩০ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই। হয়তো সাফল্য পেতে কিছুটা সময় লাগে কিন্তু লেগে থাকলে সাফল্য আসবেই।
৫. নিজেকে উৎসাহ দেওয়া
মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর শুরুর দিকে ফেসবুকে সময় দিতে গিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর লেখাপড়া শেষ করেননি। হার্ভার্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও লেখাপড়া শেষ না করাটা যেনতেন ব্যাপার নয়। এবং সেটা তিনি করেছিলেন ৩০ বছর বয়সের আগেই। এ ধরনের সিদ্ধান্তে আপনাকে কেউ সহযোগিতা করবে না বা পাশে এসে দাঁড়াবে না। অল্প বয়সে জীবনের এ রকম কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে নিজেরই উৎসাহ দিতে হয়।
৬. বয়সের তুলনায় পরিপক্ব এবং কর্তব্যপরায়ণ
সফল মানুষদের কাজে তাঁদের বয়সের ছাপ সচরাচর পড়ে না। তাঁরা চিন্তাভাবনায় বয়সের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। কাজকর্মেও তাঁরা অনেক সচেতন এবং পরিশ্রমী হন। কারণ তাঁদের সামনে থাকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য অর্জনে তাঁরা দিনরাত এক করে পরিশ্রম করেন। আর নিজেদের সিদ্ধান্তের জন্য তাঁরা নিজেদের দায় স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত থাকেন। হোক তা ব্যর্থতা বা সফলতা, কখনো দায় এড়িয়ে যান না তাঁরা।
৭. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ
সাফল্যের প্রথম ধাপ হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ। সফল মানুষরা নিজেদের জন্য একটা বাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করেন। অবাস্তব বা কল্পনাপ্রসূত ব্যাপার নিয়ে তাঁরা কাজ করেন না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁরা ভেবে দেখেন, আসলেই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব কি না। যদি তাঁরা নিজেরা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হন, তাহলে তাঁদের সাফল্য থেকে দূরে রাখা অসম্ভব।
৮. ব্যবস্থাপনার গুণ
সাফল্য পেতে হলে ভালো ব্যবস্থাপক হতে হয়। কারণ সফল ব্যক্তিদের একসঙ্গে অনেক কিছু সামলাতে হয়। সঙ্গে থাকতে হয় অসীম ধৈর্য। আর সফল ব্যক্তিরা একটা কাজ করার সময়ই পরের ধাপে কী কাজ করবেন সেটা ঠিক করে রাখেন। সে কারণে তাঁদের হতে হয় তুখোড় ব্যবস্থাপক। আর এই গুণটা অর্জন করতে হয় ৩০ বছরে পা দেওয়ার আগেই।
৯. আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাস না থাকলে কখনোই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না। আর এই গুণটা যত তাড়াতাড়ি রপ্ত করা যায় ততই মঙ্গল। আত্মবিশ্বাস কখনো কারো কাছ থেকে ধার করা যায় না, এটা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করে নিতে হয়। সফল মানুষরা খুব অল্প বয়স থেকেই আত্মবিশ্বাসী হিসেবে নিজেদের তৈরি করেন। আর আত্মবিশ্বাসের জোরেই তাঁরা এগিয়ে যান এবং সাফল্যকে বগলদাবা করেন।
১০. সাফল্যের সংজ্ঞা পাল্টে ফেলেন
সাফল্যের সংজ্ঞা সফল ব্যক্তিরাই তৈরি করেন আবার তাঁরাই পাল্টে ফেলেন। আর এটা করা সম্ভব হয় নতুন উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে। আর এই কাজটি যত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব ততই সম্ভাবনা থাকে, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। সফল ব্যক্তিরা কখনো অবসরে যাওয়ার কথা চিন্তাই করেন না। বিভিন্ন কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন তারা এবং নিজের জীবনকে অভিজ্ঞতায় পূর্ণ করে তোলেন।