জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন ও বিতর্কের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আজ সোমবার ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’ শীর্ষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে ‘সঠিক তথ্য’ দেওয়ার দাবি করেছে তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা শাহেদুর রহমান গণমাধ্যমে এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. জালাল উদ্দিন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এত অধিক হারে বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোনো কোনো মহল থেকে সঠিক তথ্যাদি পরিবেশন না করার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকগণ ও অন্যান্য সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান যে সব দাবি উত্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে সঠিক তথ্যাদি জনগণের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে যাতে সকলের নিকট বিষয়টি স্পষ্ট হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্তি মানে পদোন্নতি নয়, কেবল আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তি। দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩ এটি বিলুপ্তির সুপারিশ করে এবং তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়।’
‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যাতে টাইম স্কেল বা সিলেকশন গ্রেড ব্যতীত গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ প্রাপ্য হন, সে জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাওয়া গেলে অর্থ বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে প্রয়োজনীয় অনাপত্তি দেবে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত পদে কর্মরত নবম গ্রেডে (সপ্তম বেতন স্কেলের প্রথম শ্রেণির) চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার ৩০৮ জন। সকল পর্যায়ের ক্যাডার ও ক্যাডারবহির্ভূত প্রায় ১২ লাখ চাকরিজীবীর মধ্যে থেকে সরকারের সচিবসহ গ্রেড-১ ভুক্ত চাকরিজীবীর সংখ্যা বর্তমানে ১২২ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ৩২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষকের সংখ্যা ১১ হাজার ৪১১ জন, এর মধ্যে গ্রেড ১-ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ৮২০ জন।’
‘জাতীয় অধ্যাপকরা দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় গুণীজন। তাঁদের বেতন বা সম্মানী সিনিয়র সচিবের বেতনের সমান করার বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এই সম্মানী কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে অর্থ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেবল পত্র যোগাযোগ হয়েছে।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সরকারের একজন কর্মচারীকে সচিব পদে পদোন্নতি পেতে হলে প্রায় ২৭ থেকে ৩০ বছর বা তার বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। পঞ্চম গ্রেডভুক্ত উপসচিব পদেই পদোন্নতির জন্য প্রায় ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ১২ বছরের মধ্যে তৃতীয় গ্রেডভুক্ত অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। এ ছাড়া তাঁরা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে গ্রেড-১ প্রাপ্ত হন। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসরের সময়সীমা ৬৫ বছর। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ক্যাডার সার্ভিসসহ সব সরকারি কর্মচারীদের নির্ধারিত অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার পরও অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টার জন্য তাঁদের প্রস্তুত থাকতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পান, যা কোনো সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-তে অনেক নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি পূর্বতন জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯-এ সংশোধনী নয়, সম্পূর্ণ নতুন বেতন স্কেল। বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ও অনুশীলনের পর কোনো অসঙ্গতি থাকলে অর্থ বিভাগ পূর্ব অনুসৃত নিয়মানুযায়ী তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।’
জাতীয় বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য সব মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয় ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।