চাকরির জন্য ভাইভা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তির কাছেও ভাইভা খুবই কঠিন। দেখা যায়, অনেকে অন্যান্য ধাপগুলোতে ভালো করলেও ভাইভায় এসে বাদ পড়ে যান। যারা নতুন তাদের ক্ষেত্রে তো এ কথা বলারই অপেক্ষা রাখে না। তবে কিছু কমন প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো প্রায় সব ভাইভাতেই করা হয়ে থাকে। তাই এর জন্য প্রস্তুতি নিন আগেই। তাহলে আপনি ভাইভায় ভালো করতে পারবেন।
নিজের সম্পর্কে বলুন
ভাইভায় প্রায়ই এ প্রশ্নটি করা হয়ে থাকে। প্রশ্নকর্তারা এ প্রশ্নটি করতে ভালোবাসেন, তারা মনে করেন এ প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর মনের ভয় দূর হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই এ প্রশ্নটির উত্তর গুছিয়ে বলতে পারেন না। নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেকে লাইফস্টোরি বলে থাকেন। কিন্তু প্রশ্নকর্তারা এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীর ৪-৫টি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়, যেমন- নির্দিষ্ট দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে জানতে চান।
আপনি কেন এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান
চাকরির ইন্টারভিউতে এ প্রশ্নটিও অধিকাংশ সময়ই জিজ্ঞাসা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে অনেকেই ভুল উত্তর দিয়ে থাকেন। অনেকেই বলে থাকেন চাকরিটা আমার খুবই দরকার। এটা হয়তো সত্যি হতে পারে কিন্তু প্রশ্নকর্তারা মূলত এ প্রশ্নের মাধ্যমে জানতে চান- আপনাকে কাজটি দেয়া হলে আপনি তা কতটা দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতে পারবেন। তাই কাজটি সম্পর্কে যে আপনার আগ্রহ রয়েছে এবং সুযোগ পেলে আপনি তা যথাযথভাবে করবেন ভাইভায় সেগুলো উপস্থাপন করতে হবে।
আমরা কেন আপনাকে নিয়োগ দেব
আপনি এ প্রশ্নের উত্তর ৩টি ধাপে দিতে পারেন। প্রথমত, আপনি প্রতিষ্ঠানটির সব নিয়ম সম্পর্কে অবগত আছেন কিনা এবং তা দক্ষতার সাথে পালন করতে পারবেন কিনা, সেটা পরিষ্কার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আপনি কীভাবে দক্ষতার সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে পারবেন সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। পরিশেষে, আপনি যে প্রো-অ্যাকটিভ এবং দ্রুত সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন সে বিষয়েও অভিহিত করতে হবে।
আপনার শক্তির দিক কোনটি
এ প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা আপনার কাছে জানতে চায় আপনি কেন অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য অধিকতর যোগ্য। তাই এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আপনাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পদের দিকে নজর রেখে উত্তর দিতে হবে। কেউ কেউ এ প্রশ্নে উত্তরে বলে থাকেন; আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে, আমার যোগাযোগ দক্ষতা ভালো। কিন্তু এভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দিলে প্রশ্নকর্তাদের ইমপ্রেস করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনাকে পূর্ব অভিজ্ঞতা সমূহ ধারাবাহিকভাবে এবং সম্ভব হলে উদাহরণসহ তুলে ধরতে হবে। মনে রাখবেন, উদাহরণগুলো অবশ্যই পূর্ববর্তী চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে হবে।
আপনার দুর্বলতা কী
এটা এমন এক প্রশ্ন- যেটা অধিকাংশ প্রার্থীই অপছন্দ করে থাকেন। কিন্তু এটা মোটেও দুশ্চিন্তা করার মতো প্রশ্ন নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু দিক রয়েছে যাতে আমরা দক্ষ নই কিংবা আমরা যা করতে ভালোবাসি না। আমাদের শুধু সে দুর্বল দিকগুলো জানতে হবে। প্রথমত, এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ৩টি দুর্বল দিকের তালিকা করে নেয়া যেতে পারে। যেমন- যে বিষয়গুলোতে আপনার মনে হয় আরো উন্নতি করতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব ইতিহাস এবং শিক্ষা থেকে ওই ভুলগুলো নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আপনি কেন মনে করছেন এ দিকগুলো আপনার দুর্বল দিক; কিংবা এখানে আপনার আরো উন্নতি করতে হবে। এ সম্পর্কিত ৩টি তালিকা করুন। তৃতীয়ত, এ দুর্বল দিকগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি কি করছেন তার ৩টি তালিকা করুন।
আগামী ৫-১০ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান
এ প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকর্তা আপনার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে কিনা বা কেমন সে সম্পর্কে জানতে চান। এ প্রশ্নের নির্ভুল উত্তর নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও কাজের ভূমিকার ওপর। এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে আগামী ৫ বছরের জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় কোন তাড়াহুড়া করা যাবে না। তাছাড়া বর্তমান অবস্থার জন্য নিজের উদ্যমের প্রতি জোর না দিয়ে কর্মজীবন নির্মাণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।