বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থী যে শুধু পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত ও চিন্তার মধ্যে থাকে তা নয়, কবে ভর্তি ফরম পূরণের শেষ সময়, টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ, ভর্তি পরীক্ষা কবে- এসব কথা সব সময় মাথায় ঘুরপাক খায়।
তার ওপর একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে, কোন সিলেবাসে কী পড়তে হবে, ভর্তির যোগ্যতা কী, কীভাবে দূরের ক্যাম্পাসে যেতে হবে- তা নিয়েও চলে নানা দ্বিধা আর বিভ্রান্তি। আর শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা দূর করতে ভর্তির সময় সাহায্য করতে তৈরি করা হয়েছে অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট নামের একটি বিশেষ অ্যাপ।
তিন মাসের নিরলস চেষ্টার পর নির্মাতারা অ্যাপটি এখন প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অ্যাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তীচ্ছুদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
অ্যাপটি নির্মাণ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থী। সাইন্স শপ বিডি নামক অনলাইন শপের প্রতিষ্ঠাতা ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে অ্যাপটির কাজ শুরু হয়।
অ্যাপটির সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজাইনে কাজ করেন একই বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জাওয়াদ খান, মাহবুবুর রহমান ও শোভন মাহমুদ। ডাটা এনালাইসিসে ছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়াত সিদ্দিকী। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ, ফাহাদ ও মারুফ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন’র অধীনে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য এটি মনোনীত হয়েছে।
নির্মাতারা জানিয়েছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের জন্য সাইবার ক্যাফেতে দৌড়াদৌড়ি করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মিত এই অ্যাপটি আশা করি লাখো শিক্ষার্থীর ভরসা হিসেবে জায়গা পাবে। এটি মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর অ্যাপের বিশেষ ফিচারগুলো দেখা যাবে।’
অ্যাপটিতে যা যা রয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এই অ্যাপটি পাঁচ ভাগে ভাগ করেছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজ। যে শিক্ষার্থী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান ক্যাটাগরি অনুযায়ী সেখানে ক্লিক করলেই জেনে যাবেন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে অ্যাপটিতে। বিজ্ঞপ্তি বোঝার সুবিধার্থে সহজ ফরম্যাট ও প্রতিটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তাই এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করতে হবে না। একটি ফোন দিয়েই একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।
অ্যাডমিশন কাউন্টডাউন
এই ফিচারটির মাধ্যমে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন কখন শুরু ও শেষ- তা একসঙ্গে তালিকা আকারে দেওয়া আছে। পাশাপাশি রয়েছে অ্যাপ্লাই বাটনে ক্লিক করে কোনো ঝামেলা ছাড়া আবেদন করার সুবিধা। পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রিয় তালিকা করে রাখলে এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক তথ্যের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে।
অ্যাপটি ‘লগ ইন’ করতে যেসব তথ্য লাগবে
এসএসসি, এইচএসসি রোল, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বোর্ড ও ছবি দিয়ে একটি ক্লিকের মাধ্যমেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে। প্রতিবার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সময় একই তথ্য বারবার দিতে হবে না। শুধু কোন ইউনিটে পরীক্ষা দেবে, কোটা রয়েছে কি-না তা সিলেক্ট করেই যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে।
বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমে ভর্তি ফরমের ফি প্রদান করার সুযোগ রয়েছে। তবে কেউ এই সুবিধা নিতে না চাইলে শুধু ফোন ও ই-মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাপটির বাকি সুবিধাগুলো নিতে পারবেন। এ ছাড়া, যখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপত্র, আসন বিন্যাস, ফল প্রকাশিত হবে- তা সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যাবে।
যাতায়াত ও বুকিং করার সুবিধাও
পরীক্ষার সময় অচেনা শহরে যাতায়াত সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও এই অ্যাপ দেবে ‘ম্যাপিং’ সুবিধা। এতে পরীক্ষার্থী যে কোনো জায়গা থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো সাহায্য ছাড়াই চলে যেতে পারবেন। আর রয়েছে বাস, ট্রেন টিকেট, এমনকি হোটেল বুকিং করার সুবিধাও।
এ বিষয়ে অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট টিমের প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ইতিমধ্যে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অনেক ব্যবহারকারী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আমরা স্বপ্ন দেখি, এই অ্যাপ একদিন লাখো ভর্তি প্রত্যাশীর ভরসার প্রতীক হয়ে উঠবে। সঠিক সময় সঠিক তথ্যের অভাবে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে না দেশের একজন শিক্ষার্থীও।
আব্দুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু ভলান্টিয়ার কাজ করছেন অ্যাপটিতে যেন সবচেয়ে দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া যায়। কারণ, শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করে সহায়ক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে অ্যাডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট নামের এই অ্যাপটি।