মানসিক চাপ কমিয়ে আনার উপায় জানা থাকলে শরীর ও মন থাকবে চনমনে সুন্দর। শিখে নিন কিভাবে আপনার মন ও শরীরকে চাপ মুক্ত রাখবেন।
প্রিতিদিন কিছুটা সময় ব্যয় করুণ লেখার পেছনে। লিখুন সারাদিনে আপনার বিরক্তিকর বা মেজাজ খারাপ করা কাজগুলো, এতে করে আপনার মন মেজাজ অনেকটা হালকা হয়ে যাবে। এই লিস্ট একটি সময় আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
২) কাঁদলে কমবে মনের ভারঃ
কিশু সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভালো কাঁদতে পারলে মানসিক চাপ অনেক হালকা হয়ে যায়। কান্নার সাথে যেন মনের সব ক্লেদ ধুয়ে যায়। কান্নার সাথে এন্ডোরফিন্স (ভালো লাগার হরমোন) নামক হরমোন বের হয়ে আসে, যা আপনার টেনশন ও মানসিক চাপ অনেক কমিয়ে দেয়। সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে বন্ধুর সামনে কাঁদলে তার মনে সমবেদনা জাগে, এবং অনেক ভালো বোধ করা যায়। তাই চিন্তা কিসের কেঁদে যদি মনকে ভালো রাখা যায়, তাহলে কাঁদুন।
৩) ভুলকে প্রশ্রয় দিনঃ
আপনার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে যখন আপনি খুব জোড় দেন, তখন মানসিক চাপ অনেক বেড়ে যায়। আপনি সুস্থ থাকলেও এই মানসিক চাপ ধীরে ধীরে আপনার শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই প্রথমেই আপনি ধরে নিন যে, একদম সঠিক বলতে কিছু নেই। এরপর আপনি ধাপে ধাপে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। ত্রুটি গুলোকে আলিঙ্গন করুণ এবং আপনার ভুলগুলো থেকে শিক্ষানিন। আপনার মন এবং হৃৎপিণ্ড আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।
৪) তোমার কাছে নাই ভূবনের ভারঃ
প্রতিটি প্রকল্প বা টাস্ক হাতে পেলে কার না ভালোলাগে। কিন্তু আপনাকে আপনার সীমার মধ্যে থাকতে হবে। একের পর এক কাজ জমে যেন আপনার সামর্থের বাইরে না চলে যায়। তাই ততটুকুই চাপ বা কাজ নিন যতটুকু আপনি কুলাতে পারবেন বাড়তি কাজকে “না” বলুন। তাহলে ভালোথাকার জন্য বাড়তি কিছু সময় পাবেন।
৫) নিজেকে ও নিজের কাজগুলো গুছিয়ে নিনঃ
প্রতিদিনের কাজের একটি লিস্ট তৈরি করুণ যেখানে আপনার প্রতিদিনের জরুরী ও প্রয়োজনীয় কাজগুলো লেখা থাকবে। এই লিস্টটি আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কখন কি করতে হবে। এটা মেনে চললে কাজ ভূলে যাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেকোন একটি কাজ দিয়ে গোছানোর কাজ শুরু করতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার গাড়ী, অফিস, ঘড়, ড্রয়ার গোছানো ইত্যাদি।
৬) কিছু সহজ ব্যায়াম করুণঃ
ব্যায়াম করে আপনি যা পাবেন তা কখনো টাকায় কিনতে পারবেন না। ধরুন আপনি ২০ মিনিট আপনার বাড়ির চারিদিকে জোড়ে হাটলেন অথবা দৌড়ালেন, এই পরিশ্রম আপনাকে এনে দেবে ১২ঘন্টা ভালো থাকার মুড। মোট কথা, এমন একটু ব্যামের উপায় বেছেনিন যাতে আপনি আনন্দ পাবেন। হতে পারে মিউজিকের সাথে নাচ অথবা মাছির পেছনে ছুটোছুটি ।
৭) মুক্ত কর নিজেরেঃ
নিজেকে সবসময় ঘড়ের মাঝে বন্দি রাখবেন না। যদি সারাদিন ঘরের ভেতরে কাজ করতে হয়, তবে অল্প কিছু সময়ের জন্য বাইরে দাঁড়ান। সূর্যের আলো শরীরে লাগান। বাইরের বিশাল দুনিয়াকে দু’চোখভরে দেখুন। এই অল্প সময়ের বাইরের স্নিগ্ধ বাতাস, প্রচুর আলো আপনাকে সতেজ করবে এবং ঠান্ডা করবে মেজাজ।
৮) নিজেকে ভালোবাসুনঃ
নিজের প্রতি দয়াশীল হউন। প্রিতিদিন ইতিবাচক চিন্তা করুণ। নেতিবাচক চিন্তা করলে আপনার শুধু খারাপ লাগা বাড়বে এবং সেই সাথে বাড়বে মানসিক চাপ। নিজেকে বলুন আপনি একটি ভালো কাজ করেছেন এবং তা বিশ্বাস করুণ।
৯) কৃতজ্ঞ থাকুনঃ
আপনার বন্ধু, পরিবারের সদস্য, ভালোবাসার মানুষ অথবা সহকর্মীর কাজে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুণ, তাদের ধন্যবাদ দিন। এতে করে শুধু আপনার মনে উপর শুধুই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না, সেই মানুষগুলোর ভালোলাগবে। এবং তারা আপনাকে পছন্দ করবে।
১০) আনন্দে থাকুন সারাক্ষণঃ
আনন্দে সারাক্ষণ থাকতে, আপনার মনের মতো কিছু কাজ করুণ । আপনার মনে হতে পারে, এসব কাজ করার জন্য আপনার কাছে যথেষ্ট সময় নেই। কিন্তু, একটু সময় বের করে যদি আপনার পছন্দের কোন কাজ করেন, তাহলে এই আন্দন আপনার মন ও শরীরকে শীথিল করতে বাধ্য। এবং এর মাধ্যমে আপনি পাবেন ফুরফুরে ভাব যা আপনাকে কাজের প্রতি আরো মনোযোগী করে তুলবে। উদাহরণ স্বরূপঃ
# পরিবারের সাথে সময় কাটান। খোষ গল্প করুণ, কৌতুক করুণ।
# সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। যেমনঃ গল্প বা কবিতা লেখা, কারু বা হস্ত শিল্পে অনেক আনন্দ পেতে পারেন।
# আপনার পোশা বেড়াল অথবা অন্য যে কোন প্রাণির সাথে খেলে কিছুটা সময় আনন্দ পেতে পারেন।
১১) নিজেকে মেলে ধরুনঃ
হাসি, রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ যে কোন ভাব প্রকাশ করে ফেলুন। নিজেকে অন্যের কাছে লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করে ফেলুন, তাতে আপনার মন অনেকটা হালকা হয়ে যাবে এবং মনে আসবে ফুরফুরে ভাব।
১২) আড্ডায় হোন মশগুলঃ
আপনার কাজের পরিকল্পনা, বন্ধু এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুণ। তাদের মতামতের প্রয়োজন হোক বা না হোক তাদের সাথে কথা বলুন। খুব কাছের একজন বন্ধু বা পরিবারের যে কোন সদস্যের সাথে আপনার মনের আনন্দ, দুঃখ, কষ্টগুলো শেয়ার করুণ। এতে আপনি নিজেকে অনেক হালকা বোধ করবেন। এবং এভাবে আপনি অনেকটা মানসিক চাপ কমিয়ে আনতে পারবেন।
১৩) প্রাণ খুলে হাসুন অকারণঃ
হাসি আমাদের মনকে ভালো করে তোলে। কৌতুক শুনে, সিনেমা বা নাটক দেখে অথবা হাসির বই বা কমিক্স পড়ে প্রাণখুলে জোড়ে হাসতে ভায় পাবেন না। এমনকি আপনি যদি একা থাকেন তবুও জোড়ে হাসুন। এই হাসি আপনার মনকে প্রসন্ন করে দেবে। হৃদ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেবে। মন হবে চাপ মুক্ত।
১৪) তাড়াহুড়ো না করে ধীরে কাজ করুণঃ
হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত কাজ করার থেকে পরিকল্পনা মাফিক কাজে টেনশন কমে, সফলতাও আসে বেশি। তাই তাড়াহুড়ো করে কাজ না করে, ধীরেসুস্থে সময় নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ শেষ করুণ। এতে যেমন তৃপ্তি পাবেন, সফলতাও আসবে দ্রুত।
১৫) ঘুম হোক প্রশান্তির
প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুণ। ঘুম না হলে, চাপ ও টেনশন কমাতে পরিশ্রম করুন , ইচ্ছে হলে ব্যায়াম করুণ। বই পড়ুন। তাতেও লাভ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।