বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল কলেজের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায়ের আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো লক্ষ্য ঠিক করেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। প্রথমবারের মতো এ খাতে মূসক আরোপ করায় কত টাকা আদায় হবে তা ঠিক করা হয়নি। চলতি অর্থবছরে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেবামূল্যের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে।
তবে এ খাত থেকে কত রাজস্ব আদায় হবে, তা নিয়ে বাজেট তৈরির সময় একটি ভিত্তি নির্ধারণ করেছে এনবিআর। সেটি হলো বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে টিউশন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থে সাড়ে ৭ শতাংশ মূসক রয়েছে। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে ৭১ কোটি টাকা মূসক আদায় হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও প্রকৌশল কলেজ থেকে মূসক বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একেই ভিত্তি ধরা হয়েছে। প্রথমবারের মতো বলে কিছুটা রক্ষণশীল হিসাবে চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ৫০ কোটি টাকার মতো মূসক আদায় হতে পারে। এটি লিখিত কোনো লক্ষ্য নয়, অনুমানভিত্তিক। এনবিআরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মূসক প্রত্যাহারের জন্য কয়েক দিন ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভ্যাট আদায়
গত শনিবার রাতে এ বিষয়ে এনবিআর আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছে। এ ব্যাখ্যাতে গত বৃহস্পতিবারের মতো চারটি বিষয় উল্লেখ করার পাশাপাশি কোন পদ্ধতিতে মূসক হিসাব করা হবে, তা বলেছে এনবিআর। ব্যাখ্যায় আবারও বলা হয়েছে, মূসক দেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীরা নয়।
এনবিআরের সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এর ধারা ৫-এর উপধারা (৪) অনুযায়ী, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মূসক ধার্য করা হবে সর্বমোট প্রাপ্তির ওপর। আর একই আইনের ধারা ২-এর দফায় (ভ) ‘সর্বমোট প্রাপ্তি’ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সর্বমোট প্রাপ্তি অর্থ হলো সেবা প্রদানকারী কর্তৃক প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে মূসক ব্যতীত কমিশন বা চার্জসহ প্রাপ্য বা প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ।
এনবিআরের ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর বিধিমালা, ১৯৯১-এর বিধি ২৩ অনুসারে, সেবার সর্বমোট মূল্য দুই ধরনের হতে পারে। যেমন মূসক অন্তর্ভুক্ত মূল্য ও মূসক-বহির্ভূত মূল্য। সেবার মূল্য এবং মূসক আলাদাভাবে উল্লেখ না থাকলে সেবাপ্রধান বাবদ যে মূল্য নেওয়া হয়, সেটাই মূসক অন্তর্ভুক্ত মূল্য।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ও মূসক কীভাবে আলাদা করা হবে, এর একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে এনবিআরের ব্যাখ্যায়। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বমোট টিউশন ফি গ্রহণ করেছে এক লাখ টাকা। এই মূল্য হলো মূসক অন্তর্ভুক্ত মূল্য। এক লাখ টাকাকে ১০৭ দশমিক ৫ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবে ৯৩০ টাকা ২৩ পয়সা। এই মূল্যকে সাড়ে ৭ দিয়ে গুণ করলে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৯৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা। এর মানে হলো এক লাখ টাকার মধ্যে মূসকের পরিমাণ হলো ৬ হাজার ৯৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা। এক লাখ টাকা থেকে মূসক বাবদ ৬ হাজার ৯৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা বিয়োগ করলে অবশিষ্ট থাকে ৯৩ হাজার ২৩ টাকা ২৬ পয়সা। এখানে ৯৩ হাজার ২৩ টাকা ২৬ পয়সা হলো ‘সর্বমোট প্রাপ্তি। আর মূসকের পরিমাণ হবে ৬ হাজার ৯৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা। অর্থাৎ এক লাখ টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেবে সর্বমোট প্রাপ্তি বাবদ ৯৩ হাজার ২৩ টাকা ২৬ পয়সা এবং মূসক বাবদ সরকারকে দেবে ৬ হাজার ৯৭৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
তবে এনবিআর এই ব্যাখ্যা দিলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখছেন শিক্ষার্থীরা।