বছরের শুরুতে স্কুল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বইয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধির রশিদও দেয়া হয় রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত উইল লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিশু শিক্ষার্থীদের। গত বছরের চেয়ে এবছর প্রতিষ্ঠানটির ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর বাড়তি বেতন না দিতে পারলে স্কুল থেকে অভিভাবকদের বের হয়ে যাওয়ার ধমক দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে আন্দোলনও শুরু করেছেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। স্কুলটির সামনে রোববার সকাল থেকেই অবস্থান নেন অনেকেই। প্রায় সাড়ে নয় হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপিও দেন তারা।
স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মহির বাবা তুহিন অভিযোগ করে বাংলামেইলকে বলেন, ‘শুক্রবার আমাদের ছেলেদেরকে বই দেয়ার সময় জানিয়ে দেয়া হয়- ভর্তি ও সেশন ফি বাড়ানো হয়েছে। যার পরিমাণ গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর আমার ছেলে সেশন ফি ছিল ১৩শ টাকা। কিন্তু এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ টাকা। ভর্তি ফি ছিল ৫ হাজার টাকা। এ বছর তা করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা। আমরা ফি না বাড়ানোর জন্য অনুরোধ জানালে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বলে- ফি দিতে না পারলে স্কুল থেকে বের হয়ে যান।’
তার সাথে তাল মিলিয়ে একাধিক অভিভাবক বলেন, এবছর মতিঝিল আইডিয়ালে ১০০ টাকা ও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য স্কুলেও সামান্য ফি বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের সাথে কথা বলে যদি এই ফি বাড়ানো হতো তাহলে সমস্যা হতো না।
ভর্তি ফির রশিদ উঁচু করে অভিভাবক শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘এ বছর প্রথম শ্রেণিতে বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি ফি ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা। সব সেক্টরেই ফি বাড়ানো হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কোনো শিশু শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি ধরা যাবে না। ফির কারণে যাতে কেউ ঝরে না পড়ে। কিন্তু এখানে তা তো মানাই হচ্ছে না বরং উল্টো আইন চালানো হচ্ছে।’
অভিভাবকরা অভিযোগ করে আরো বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দোহাই দিয়ে চলে। তাদের কাছে অভিযোগ করলে তারা বলেন- সরকার স্কুলের ৩৫ শিক্ষককে এমপিও দিয়েছেন। বাকিদের দেয়নি। এদের বেতন দেয়ার জন্য বাড়তি টাকা আমরা কোথায় থেকে পাবো?
তারা আরো জানান, মন্ত্রীর সাথে কথা বলা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। তারা আমাদেরকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী ফি না বাড়াতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে তাদের মন্ত্রী মেনন সাহেব বড়?
শিক্ষার মানের প্রশ্ন তোলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা বলেন, এ স্কুলের ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষকরা বাচ্চাদের সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না। টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এখানে শিক্ষার মান প্রাইমারির চেয়েও খুব খারাপ।
‘সব সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে, এমন দোহাই দিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বেতন বাড়ানোর কথা বলে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর অভিভাবক কি সরকারি চাকরি করে? আমরা তো কোনো চাকরি করি না তাহলে আমাদের ছেলেদের কেন বেতন বাড়ানো হয়েছে?’ বললেন, অভিভাবক সুরাইয়া ইসলাম।
অভিভাবকরা বলেন, আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান করা না হয়। তাহলে পরদিন থেকে কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানতে স্কুলের ভেতরে যেতে চাইলে প্রধান গেটেই বাধা দেয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। পরিচয় দেয়ার পর তারা জানান, স্কুলের স্যার-ম্যাডামরা মিটিংয়ে আছেন। এখন তাদের পাওয়া যাবে না। আপনি পরে আসুন।