প্রাথমিক শিক্ষায় এগিয়েছে বাংলাদেশ

গত ১৬ বছরে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ সময়ে শিক্ষকদের যোগ্যতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের শেখার যোগ্যতাও। বিদ্যালয়ে গমন-উপযোগী শিশুদের ভর্তির হার বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার। কমেছে ঝরে পড়ার হার।
Educationবেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের প্রাথমিক শিক্ষাসংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন থেকে টেকসই ভবিষ্যত’ শীর্ষক ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০১৫’ গবেষণা প্রতিবেদনটি শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের গবেষক সমীর রঞ্জন নাথ। গবেষনায় বিভিন্ন সূচককে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৪ সালের সঙ্গে তুলনা করে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতির চিত্র তুলে ধরা হয়। অবকাঠামো উন্নয়ন, নিট ভর্তির হার, শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ নানা ক্ষেত্রে এই উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষায় উন্নয়ন ঘটলেও এখানে আরও অনেক কিছু করার আছে। কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষকদের। কত ভাগ শিক্ষক কর্তব্যে অবহেলা করছেন, তারও গবেষণা হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলে শিক্ষকদের বিদেশে প্রশিক্ষণ দরকার। আমাদের শিশুদের পড়ানোর জন্য পিটিআই ট্রেনিংই যথেষ্ট। শুধু বেতন স্কেল নিয়ে বসে থাকলে তো শিক্ষার উন্নয়ন হবে না।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ ও হোসেন জিল্লুর রহমান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ডিএফআইডির বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যারোলাইন সানারস। সভাপতিত্ব করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের চেয়ারপারসন কাজী রফিকুল আলম।

প্রতিবেদনে শিক্ষকদের যোগ্যতা উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে যেখানে ৪৮.৩ শতাংশ শিক্ষকের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রি ছিল, ২০১৪ সালে তা ৫৭. ২ শতাংশ হয়েছে। তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই হার ৬৬.৯ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ৬৩.৪ শতাংশ নারী শিক্ষক রয়েছেন। ১৬ বছর আগে এই হার ছিল ৩২ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক শিক্ষাজীবনের সকল স্তরে মানবিক শাখায় লেখাপড়া করেছেন। তবে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখায় লেখাপড়া করেছে এমন শিক্ষকের সংখ্যাও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৪ সালে ৭৪.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সার্বিকভাবে যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিষয়ভিত্তিক যোগ্যতাতেও শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে ভালো করেছে। যেমন, গণিতে ২০০০ সালে ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ২০১৪ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৬৯.২ শতাংশে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার হার বেড়েছে। ১৯৯৮ সালে এই হার ছিল ৮৬.৫ শতাংশ। ২০১৪ সালে এসে তা হয়েছে ৯২ শতাংশ। বর্তমানে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার প্রায় ২০ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে বলে দেখানো হয়। নিট ভর্তির হার ১৯৯৮ সালে ছিল ৭৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে এসে দাঁড়ায় ৯৪.৫ শতাংশ।
গবেষক সমীর রঞ্জন নাথ বলেন, এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০১৯ সালে গিয়ে শতভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে।
গবেষণার মূল বার্তায় বলা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা এখন আগের চেয়ে বেশি সমর্থ। তবে নতুন জাতীয়করণ হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বেশ কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, প্রাথমিক শিক্ষা অসমাপ্ত রাখা, বিদ্যালয় বর্হিভূত শিশু, সন্তোষজনক শিখনফল অর্জন, প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনো অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।
সূত্র:সমকাল