অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের মতো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কেন নন ভ্যাকেশনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে সরকারের ওপর রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।
নন ভ্যাকেশনের সুবিধা দাবী করেে একটি রিট আবেদনের শুনানী শেষে আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোয়াজ্জাম হোসেন ও মো. বদরুজ্জামানের বেঞ্চ এই আদেশ দেন বলে রিটকারী মো. সিদ্দিকুর রহমান সোমবার সন্ধ্যায় জানান।
প্রাথমিক শিক্ষকদেরও নন ভ্যাকেশনের সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে রিট আবেদনকারীদ্বয় যথাক্রমে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান ও শিক্ষক শরিফুল ইসলাম।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ২ সপ্তাহের মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব, অডিটর জেনারেল ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মোট ছয়জনকে আদালতে লিখিত জবাব পেশ করতে হবে।
কয়েকমাস আগে রিট করেছেন বলে জানান সিদ্দিকুর রহমান। তাদের পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান। রিটের আবেদনে বলা হয় অন্যান্য চাকরীজীবীদের সাথে প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটি ও সুযোগ-সুবিধার কোনো পার্থক্য নাই বরং প্রাথমিক শিক্ষকরা কম ছুটি ও সুবিধা ভোগ করেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারি কর্মচারীদের ছুটির তালিকায় ২২ থেকে ২৪ দিন বার্ষিক ছুটি থাকে। এছাড়াও থাকে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। মোট ছুটি দাঁড়ায় প্রায় (২৪+১০৪) = ১২৮ দিন। প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় ছুটি থাকে ৭৫ দিন। সাপ্তাহিক ছুটি থাকে শুক্রবার। মোট ছুটি (৭৫+৫২) = ১২৭ দিন। বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ যেমন ১১ কমিটির সভা, খেলাধুলা, উঠান বৈঠক ও সরকারি নানা কাজে প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেক ছুটি হারিয়ে যায়।
প্রতিবারের মতো এ বছরও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী, প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক শিক্ষকরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সরকারি বিধিমোতাবেক তিন বছরের স্থলে চার বছরে পেতে যাচ্ছেন।
সরকারি চাকরিজীবীদের ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদনের জন্য অতিরিক্ত ১৫ দিনের ছুটি দেয়া হয়। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিনের বাড়তি ছুটি দেয়া হয় না। শিক্ষকদের বার্ষিক ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি অথবা রমজানের ছুটিকে ১৫ দিনের শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে দেখানো হয়। আরবি বছরে ৩৬৫ দিনের স্থলে ৩৫৫ দিন। রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি দেখানো হলে এই শিক্ষকরা চার বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে থাকবেন।
গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন দেখানো হলে বা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো ১৫ দিন অতিরিক্ত ছুটি দেয়া হলে প্রাথমিক শিক্ষকরাও তিন বছর পরপর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবেন।
২০১৬ সালের ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি ছয়দিন রাখা হয়েছে। এতে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা রমজানের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে দেখাতে বাধ্য হবেন।
এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষকরা তাদের সময়মতো পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল কাশেম ফজলুল হকের আবেদনক্রমে ২০০৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর গ্রীষ্মের ছুটিকে শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি হিসেবে ১৫ দিন রাখার জন্য অফিস আদেশ জারি করে।
অথচ ওই আদেশ ২০১৫ সাল থেকে অকার্যকর হয়ে আসছে।
অপরদিকে বিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, জাতির পিতার জন্ম দিবস, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষের দিবসকে পালন করার জন্য বিদ্যালয় খোলা রাখা প্রয়োজন। এতে শিশুদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হবে। অথচ ছুটির তালিকায় ছুটি দেখিয়ে শিক্ষকদের যথাযথ মর্যাদায় দিবসগুলো পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়।