প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ৬৪ জেলাকে আটটি অঞ্চলে ভাগ করে আট সেট প্রশ্নে এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেবে সরকার।
কোন জেলা কোন অঞ্চলে থাকবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছাড়া আর কেউ তা জানতে পারবেন না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস মঙ্গলবার বলেন, “আট অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নপত্র তারা ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।”
জ্ঞানেন্দ্র নাথ বলেন, “কোনোভাবে যদি কোনো একটি জেলার প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যায় তাহলে শুধু ওই জেলার শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ পাশের জেলাটি কোন অঞ্চলে পড়েছে তা কেউ সহজে জানতে পারবে না।”
এতদিন মাত্র এক সেট প্রশ্নে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এই সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া হত। আর এ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আসছে গত কয়েক বছর ধরেই। আগামী ২২ থেকে ২৯ নভেম্বর সকাল ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীর পরীক্ষাগুলো হবে এবার। আর তাতে অংশ নেবে ৩২ লাখ শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, লটারির মাধ্যমে আটটি অঞ্চলে আটটি করে জেলাকে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার দিন এসব জেলার হিসাব পাল্টে যাবে। সে অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নের সেট নির্দিষ্ট জেলায় পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ জানান, এবার ৩২ সেট প্রশ্নের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে আট সেট প্রশ্ন বাছাই করে তা বিজি প্রেসে ছাপানো হয়েছে।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এবার পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ‘ডিজিটালি’ প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক সমাপনীতে কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ওই পদ্ধতি সুবিধাজনক হবে না বলে জানান তিনি।
পরীক্ষার্থী বেড়েছে দেড় লাখ
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে মোট ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে প্রাথমিক সমপানীতে ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩ এবং ইবেতেদায়ীতে তিন লাখ পাঁচ হাজার ৪৫১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে। প্রাথমিক সমাপনীতে এ বছর ১৫ লাখ ৯২ হাজার ৫০৮ জন ছাত্র এবং ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ৫৫৫ জন ছাত্রী পরীক্ষা দেবে।
অন্যদিকে ইবেতেদায়ীতে বসবে এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬১ জন ছাত্র এবং এক লাখ ৪৪ হাজার ৮৯০ জন ছাত্রী। গত বছর প্রাথমিক ও ইবেতেদায়ী সমাপনীতে ৩০ লাখ ৯৫ হাজার ৩২১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। সেই হিসেবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৯৩ জন।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। আর ইবতেদায়ীতে এ পরীক্ষা হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে।
প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেওয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনীর ফল দেওয়া হচ্ছে। আগে এ পরীক্ষার সময় ছিল দুই ঘণ্টা। ২০১৩ সাল থেকে পরীক্ষার সময় আধ ঘণ্টা বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়।
প্রাথমিক সমাপনীর সূচি
২২ নভেম্বর ইংরেজি, ২৩ নভেম্বর বাংলা, ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৫ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৬ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৯ নভেম্বর গণিত।
ইবতেদায়ী সমাপনী সূচি
২২ নভেম্বর ইংরেজি, ২৩ নভেম্বর বাংলা, ২৪ নভেম্বর পরিবেশ পরিচিতি সমাজ/পরিবেশ পরিচিতি বিজ্ঞান, ২৫ নভেম্বর আরবি, ২৬ নভেম্বর কুরআন ও তাজবীদ এবং আকাঈদ ও ফিকহ এবং ২৯ নভেম্বর গণিত।