পেনশনের জন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না!

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের জন্য আর ঢাকায় আসতে হবে না। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা বাদে মাঠপর্যায়ে কর্মরত দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়েই মঞ্জুর হবে তাঁদের অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) ও পেনশন। তবে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের পেনশন ও পিআরএল মঞ্জুরি এখনকার মতো ঢাকা থেকেই করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে মন্ত্রণালয়গুলোও।

পেনশন

পেনশন ও পিআরএল মঞ্জুরি বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অর্জিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রান্তি বিনোদন ছুটি এবং সাধারণ ভবিষ্য তহবিলের (জিপিএফ) আবেদনও মাঠপর্যায়ে নিষ্পত্তি করা হবে। এর ফলে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি কমবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার বিষয়ে সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে প্রশাসনে গতিশীলতা আনা ও সেবার মানোন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের অর্জিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, শ্রান্তি বিনোদন ছুটি, সাধারণ ভবিষ্য তহবিলের অগ্রিম মঞ্জুরি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের পিআরএল ও পেনশন মঞ্জুরির ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের আদেশ জারি করতে মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে সরকারের সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেনশন ও পিআরএল ঢাকা থেকে মঞ্জুর করা হয়। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে যেমন সারা দেশের জনবলের সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না, তেমনি চাকরিজীবীদেরও হয়রানির মুখে পড়তে হয়। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঢাকায় এসে পেনশন-সংক্রান্ত নথির পেছনে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হলে তাঁদের হয়রানি কমবে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ছুটি মাঠ পর্যায় থেকেই নিষ্পত্তি করা গেলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যালয় ছেড়ে ঢাকায় আসার দরকার হবে না।

একান্ত প্রয়োজন না হলে পদ সৃজন নয় : এদিকে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের রাজস্ব তহবিলে টান পড়েছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে নতুন করে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি দরকার হওয়ায় আপাতত নতুন করে পদ সৃজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গত ১৯ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে একান্তই প্রয়োজন না হলে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাওয়ার প্রয়োজন নেই। পদ সৃজনকালে দেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখতে হবে। মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর কতগুলো পদ সৃজন করা প্রয়োজন, তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আলাপ-আলোচনা করে নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে পদ সৃজনের আগের কোনো প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে না। নতুন করে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।’

নন-ক্যাডার পুল হচ্ছে : এ ছাড়া নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য একটি স্বতন্ত্র ও স্বচ্ছ ধারা প্রবর্তন করতে তাঁদের জন্য আলাদা ‘নন-ক্যাডার পুল’ বা ‘এক্স-ক্যাডার পুল’ গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সচিব সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক নন-ক্যাডার পুল বা এক্স-ক্যাডার পুল তৈরি করা হলে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা পদায়নে একটি স্বতন্ত্র ও স্বচ্ছ ধারা প্রবর্তিত হবে। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে। নন-ক্যাডার পদে যাঁরা আগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের সব সুবিধা আগের চাকরির শর্তানুযায়ী বজায় রাখা যেতে পারে।

 

সূত্র: লেটেস্ট বিডি নিউজ ডট কম