১২ কারণে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে সরকার। এত দিন বিষয়টি অলিখিত থাকলেও এখন সেটা আইনি রূপ দেয়া হচ্ছে। পুরনো আইনটি সংশোধন করে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইন, ২০১৬ এর খসড়া তৈরি করেছে সরকার। এখন খসড়া আইনটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে যাচাই বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইন ২০১৩-এর খসড়াটি অধিকতর যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা করে গত ২০শে জানুয়ারি নতুন আইনটি পাঠিয়েছে। খসড়া আইনের ৯ ধারায় পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদানে অস্বীকৃতি কলামে বলা হয়েছে, আবেদনকারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ থাকলে তিনি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না।
এ ছাড়া আবেদনকারী যদি বাংলাদেশ কোলাবরেটস অর্ডার এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাকে পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। এ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে রুজু করা ফৌজদারি মামলার উপস্থিতি এড়াতে বা তার অপরাধের বিচার বা দণ্ড এড়ানোর জন্য কেউ বাংলাদেশ ত্যাগ করতে উদ্যোগী হলে; মানিলন্ডারিং, মানব পাচার বা মুদ্রা, মাদকদ্রব্য বা অস্ত্র পাচারে বা অন্য কোনো আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ব্যবসায় জড়িত আছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ থাকলে তাকে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। একই সঙ্গে সরকার কর্তৃক কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলে; গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আবেদনকারী বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে বা জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। একই সঙ্গে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রে আবেদনকারীর অবস্থানের কারণে সেই দেশের বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া আবেদনকারী কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংগঠন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাকে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানানো যাবে।
নতুন আইনে ছয় কারণে পাসপোর্ট আটক ও প্রত্যাহার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আটক ও প্রত্যাহারের কারণের মধ্যে রয়েছে- পাসপোর্টে মৌলিক কোনো তথ্য গোপন করলে বা মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে; আদালত কর্তৃক পাসপোর্ট প্রত্যাহার বা আটক করার সুপারিশ করলে; কোনো পাসপোর্টধারীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলে এবং কোনো পাসপোর্টধারী পাসপোর্টের শর্ত ভঙ্গ করলে বা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই পাসপোর্ট ফেরত দিতে ব্যর্থ বা অস্বীকৃতি জানালে পাসপোর্ট আটক বা প্রত্যাহার করা যাবে। আইনে বলা হয়েছে, কোনো ফৌজদারি আদালত পাসপোর্টধারীকে দণ্ড দিলে দণ্ড দেয়ার সময় তার পাসপোর্ট প্রত্যাহারের আদেশ দিতে পারবেন।
এ ছাড়া কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো অভিযুক্তকে জামিন দেয়ার শর্ত হিসেবে সাময়িকভাবে তার পাসপোর্ট আটক করতে পারবে। একই সঙ্গে সরকার বা সরকারের পূর্ব অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ক্ষেত্রে কোনো পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে প্রত্যাহার বা আটক করতে পারবে। পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অননুমোদিতভাবে একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।