নতুন নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে পারে বলে শিক্ষা মন্ত্র্রণালয় ও বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে, এর আগে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত এনটিআরসিএ-এর বোর্ড সভায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবার মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনার অপেক্ষা।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ-এর পরিচালক তাহসিনুর রহমান দৈনিকশিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুসারে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে প্রায় এক বছর সময় লেগে যাবে। এই সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হতে পারে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তিনি জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামী মাসে শুরু করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
প্রতিদিন দৈনিকশিক্ষার শত শত পাঠক নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগ কবে শুরু হবে তা জানতে চান। এ প্রেক্ষিতে এনটিআরসিএ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অন্তবর্তীকালীন নিয়োগের বিষয়টি চিন্তাভাবনা শুরু করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৮ হাজার ৩৮৩টি। এর বাইরেও কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে।
নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমদ।
মুফাদ আহমদ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিস্তারিত নিয়মকানুন জানিয়ে এনটিআরসিএ-এর পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তার আগে কোনো নিয়োগ দেওয়া হলে তা বৈধ হবে না। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান গত বছরের ২২ অক্টোবরের আগে নিয়োগের সার্কুলার দিয়ে থাকলে তারা এখন নিয়োগ সম্পন্ন করতে পারবে।
এ পর্যন্ত ১২টি নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে ছয় লাখ প্রার্থী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও তাদের মধ্যে ৬৪ হাজার ৩২২ জন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নতুন নিয়ম অনুসারে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর করা হয়েছে।
এনটিআরসিএ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধাতালিকা তৈরির ঘোষণা দিয়েও তা প্রকাশ না করায় প্রতিদিন দৈনিকশিক্ষার লাখ লাখ পাঠক জানতে চাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গতকাল শনিবার এনটিআরসিএর দুজন কর্মকর্তা কোনও জবাব দেননি।
গত ৩০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের অনুসরণীয় পদ্ধতি প্রকাশ করে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের সব শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হয়। গত ১১ নভেম্বর এক পরিপত্রের মাধ্যমে সরকার ২২ অক্টোবর থেকে শিক্ষকদের সব শূন্যপদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।
এর আগে সরকার গত ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন সংশোধনের গেজেট প্রকাশ করে। একই সঙ্গে এনটিআরসিএ-কে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’-এ রূপান্তরিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত ডিসেম্বরে নতুন যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে তাতে শিক্ষক নিয়োগের নতুন পদ্ধতি কেবল প্রবেশ পর্যায় (এন্ট্রি লেভেল) তথা স্কুল পর্যায়ে সহকারী শিক্ষক আর কলেজ পর্যায়ে প্রভাষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করা হয়েছে। ফলে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ইত্যাদি পদে নিয়োগের ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির হাতে ফিরে গেছে।
জানা গেছে, নতুন নিয়ম অনুসারে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগযোগ্য পদের একটি চাহিদাপত্র উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবে। এই শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁর এলাকার সব প্রতিষ্ঠানের চাহিদা একীভূত করে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবরের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সব চাহিদা একীভূত করে এনটিআরসিএ-তে পাঠাবেন। এনটিআরসিএ এই চাহিদার বিপরীতে পরীক্ষা নিয়ে পদ/বিষয়ভিত্তিক জাতীয়-বিভাগ-জেলা-উপজেলা/থানাওয়ারি মেধাক্রম প্রণয়ন করে ফলাফল ঘোষণা করবে।
এদিকে নতুন নিয়ম চালুর জন্য প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রধানশিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও সুপার নিয়োগের হিড়িক পড়ে গেছে।
অনেক প্রতিষ্ঠান স্থানীয় ভুইফোঁড় পত্রিকায় ব্যাকডেটে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিয়োগ নিচ্ছেন বলে দৈনিকশিক্ষার পাঠকরা জানিয়েছেন।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা