একাদশ শ্রেণীর ভর্তি নিয়ে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টির পর এখন দ্বিতীয় মেধা তালিকা নির্ভুলভাবে প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ৬ জুলাই ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে। এতে প্রথম মেধা তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন ও যেসব ভর্তিচ্ছু কোনো কলেজেই মনোনীত হয়নি, তাদের স্থান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক গতকাল সমকালকে বলেন, বুয়েটের আইআইসিটি ইনস্টিটিউটের সহায়তা নিয়েই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। এ তালিকা নির্ভুল করার সর্বাত্মক চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, ৬ জুলাইয়ের পর ভর্তি নিয়ে সংকট কেটে যাবে।
শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুরা বিলম্ব ফি ছাড়া ২৯ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত আর বিলম্ব ফি দিয়ে ৮ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে। আগামী ৬ জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের পর ওই মেধা তালিকার ভর্তিচ্ছুরা ১০ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হতে পারবে। তাই প্রথমবার আবেদন করেও বাদ পড়া ৫৩ হাজার ৮৫০ জন, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অন্য বিভাগে মনোনয়ন পাওয়াসহ নানা রকম জটিলতার শিকার ভর্তিচ্ছুরা এবার স্বস্তি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে, গতকালও ঢাকা বোর্ডে শত শত অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছু ভিড় করেন। তারা জানিয়েছেন, নানা সমস্যা আর ত্রুটির কথা। গতকাল বুধবার সারাদেশে একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে ভর্তি জটিলতার কারণে রাজধানীর বেশিরভাগ কলেজে নবীন শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হলেও সেভাবে ক্লাস শুরু হয়নি। দু’চারটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন,
মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোজা ও ঈদের ছুটি চলছে। ঈদের পরই পুরোদমে ক্লাস শুরু হবে বলে তারা মনে করছেন। অন্যদিকে, ত্রুটিপূর্ণ তালিকা প্রকাশের দায়-দায়িত্ব নিতে চাইছেন না শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কেউই। এখন নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত মন্ত্রণালয়, বোর্ড ও বুয়েটের কর্মকর্তারা। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে বলা ছিল, ভর্তিবঞ্চিত সবাইকে রিলিজ স্লিপ নিয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু সোমবার ওয়েবসাইট থেকে ওই নির্দেশনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নতুন নতুন সংকটে পড়ে কলেজের অধ্যক্ষ, ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকরা বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিলেও সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাচ্ছেন না। এর ফলে দেশের বেশিরভাগ কলেজই এখন আর সরকারের জারি করা নীতিমালা মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারছে না। সবাই যে যেভাবে পারে, শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। ঢাকা বোর্ড থেকে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ত্রুটির কারণে সরবরাহ করতে না পারায় ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত গ্রেডশিট প্রিন্ট করে জমা দিতে বলা হচ্ছে। তবে ট্রান্সক্রিপ্ট সরবরাহ বন্ধ রাখায় কলেজগুলো ধরে নিচ্ছে, এখন আর বোর্ডের মেরিটলিস্টের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। যে যেভাবে পারে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে।
এ বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম গতকাল বলেন, ‘প্রথম দিন নিজেদের শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। সোমবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় তালিকা পাওয়ায় আজ (গতকাল) বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো হচ্ছে।
ভুলকেই এখন শুদ্ধ করা হচ্ছে : কেবল বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের জন্য রাজধানীর বিশেষায়িত সরকারি বিজ্ঞান কলেজে আসন ও শিক্ষক না থাকলেও অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় শিক্ষা বোর্ডের ‘ভুলের কারণে’ বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির মনোনয়ন দেওয়া হয়। কেবল মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পাস করা ৩২ জনকে এ কলেজে বাণিজ্যে ভর্তি হতে বলা হয়েছে। এ ভুল নিয়ে ভর্তিচ্ছুরা শিক্ষা বোর্ডের দ্বারস্থ হলে এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ওই কলেজে এ বছর থেকে বাণিজ্য শাখা খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বিশেষায়িত এ কলেজের বৈশিষ্ট্য বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে মুখ খোলেননি সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। জানা গেছে, কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে মোট আসন এক হাজার ২০০। কলেজ অধ্যক্ষ বলেন, এরই মধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১১শ’র মতো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
ভুয়া আবেদনের শিকার ভর্তিচ্ছুরা :ভর্তিচ্ছু কোটায় আবেদন করেনি, অথচ তাদের ফল প্রকাশ হয়েছে কোটায়। এ সমস্যার কারণ সম্পর্কে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ সমকালকে বলেন, হয়তো শিক্ষার্থী নিজে আবেদন করেনি, কিন্তু তার অজান্তে অনলাইন ও এসএমএসে অন্য কেউ আবেদন জমা করে দিয়েছে। ফলে এখন বিপাকে পড়েছে ওই শিক্ষার্থী। এ জন্য বোর্ডে লিখিত আবেদন করে ‘ভুয়া আবেদন’ সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা বলছে, এতে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নিজের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে কি-না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। তবে বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও এবারের ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া মো. কায়কোবাদ মনে করেন, নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে খুব সহজেই এই জটিলতা কাটানো সম্ভব।
মানহীন কলেজগুলোর রমরমা অবস্থা :সদ্য প্রবর্তিত ‘স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম’-এ শিক্ষার্থীদের কষ্ট, সময় ও শিক্ষাবাণিজ্য থামানো সম্ভব হলেও বিপত্তি ঘটেছে অন্যখানে। ভর্তিচ্ছুদের কে কোন কলেজে ভর্তি হওয়ার উপযোগী_ সেটার কোনো মনিটরিং নেই। ফলে এমন অনেক কলেজ আছে, যেগুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেবল যাত্রা শুরু করেছে, অবকাঠামো নেই, নেই দক্ষ শিক্ষকও। তাদের ক্ষেত্রে যত শিক্ষার্থী ভর্তি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, ঠিক একইভাবে সমপরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে পুরনো, দক্ষ শিক্ষক আছে এমন কলেজকেও। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন অনুমোদন পাওয়া কলেজগুলোসহ আরও কিছু কলেজ জোর করে অথবা শিক্ষার্থীদের না জানিয়ে তাদের কলেজকে একমাত্র পছন্দের কলেজ বা প্রথম পছন্দ দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করছে। এতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাইলেও ভালো কলেজ পায়নি এবং তারা প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারেনি।
সৌজন্যেঃ সমকাল