তুরস্কে বিনা খরচে পড়াশোনা, ডরমেটরিতে ফ্রি থাকা খাওয়া!

তুরস্ক সরকার প্রতিবছর পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংস্থা বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিসহ তুরস্কে পড়ার সুযোগ করে দেয়। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ বা আংশিক বৃত্তি দিয়ে থাকে। তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ইরাসমাস মুন্ডুসের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায়।

Quiet

বাংলাদেশি কিংবা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য তুরস্কে দুভাবে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

প্রথমত, বৃত্তির আওতায়;

দ্বিতীয়ত, নিজ খরচে

তুরস্ক সরকারের বৃত্তি পৃথিবীর সব দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য এ বৃত্তি অন্যান্য দেশের বৃত্তির চেয়ে অনেক সহজতর এবং সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও অনেক ভালো। তুরস্ক সরকার বিভিন্ন স্তরে ৬০-৭০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে থাকে। তা ছাড়া প্রতিবছরই বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসে অনলাইনে বৃত্তির অবেদন করতে হয়।

আবেদন করার এক মাসের মধ্যে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ঢাকার তুরস্ক দূতাবাসে ডাকা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় এক থেকে দুই মাসের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ই-মেইল করা হয়। নির্বাচন প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি তুরস্ক দূতাবাস পরিচালনা করে, যেখানে বাংলাদেশ সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই।

যেসব ক্যাটাগরিতে অবেদন করা যায় :

১. অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডি।

২. উচ্চতর গবেষণা প্রোগ্রাম। এ বছর থেকে শুরু হয়েছে।

৩. খেলাধুলা এবং সংস্কৃতিতে এ বছর থেকে শুরু হয়েছে।

৪. মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য নবম শ্রেণি থেকে বৃত্তি।

যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাবে : বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে টিউশন ফিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় খরচ দেয়া হবে। থাকা-খাওয়া সরকারি ডরমিটরিতে, যা সম্পূর্ণ ফ্রি। ফ্রি স্বাস্থ্য বিমা তথা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা। এক বছরের তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স সম্পূর্ণ ফ্রি। মাসিক ভাতা ( অনার্স ২৫০ ডলার, মার্স্টাস ৩৬০ ডলার এবং পিএইচডি ৫০০ ডলার, উচ্চতর গবেষণার জন্য ১০০০ ডলার) যাওয়া-আসার ফ্রি বিমান টিকেট। পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগ। এ বছর থেকে শুরু হয়েছে।

আবেদনের যোগ্যতা :

১. অনার্স আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর, মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর, পিএইচডির জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।

২. তুরস্কের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকা যাবে না।

৩. ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে চাইলে (IELTS, TOFEL, GRE, GMAT) লাগবে। সাধারণত তুরস্কের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তুর্কি ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়।

এই বৃত্তির জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়।

প্রথমত, একাডেমিক রেজাল্ট। অর্থাৎ অনার্সের জন্য এসএসসি/সমমান এবং এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় ৭০% নম্বর (তবে মেডিকেলের জন্য ৯০% নম্বর) এবং মাস্টার্স-পিএইচডির জন্য অনার্স ও মাস্টার্সে ৭৫% নম্বর থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিস। অর্থাৎ কোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, একাডেমিকসহ বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা, অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম-সেমিনারে ওয়ার্কশপ বা অংশগ্রহণ করে থাকলে তা আবেদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আবেদন করতে যা লাগবে :

১. পাসপোর্ট/জাতীয় আইডি কার্ড/জন্মনিবন্ধন সনদের (ইংরেজিতে অনুবাদ করা) স্ক্যান কপি।

২. সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

৩. সব একাডেমিক সার্টিফিকেট।

৪. সব একাডেমিক মার্কশিট।

৫. দুটি রেফারেন্স লেটার। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক হলে ভালো হয়।

৬. এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিসের সব সার্টিফিকেট।

৭. পাবলিকেশন থাকলে উল্লেখ করা।

ওপরের সব ডকুমেন্ট স্ক্যান কপি করে রেডি রাখতে হবে।

বৃত্তির আবেদন করার সময় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবজেক্ট বাছাই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যাদের রেজাল্ট ভালো এবং ওপরে উল্লেখিত সব যোগ্যতা রয়েছে, তারা তুরস্কের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চয়েজ করতে পারেন। আর যারা যোগ্যতার দিক থেকে একটু দুর্বল, তারা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করে দিলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তুরস্কে জুন, জুলাই ও আগস্ট—এ তিন মাস গ্রীষ্মের বন্ধ থাকে। আর প্রতিবছর একাডেমিক সেশন শুরু হয় সেপ্টেম্বরে। অর্থাৎ প্রতিবছর আপনি তিন মাস ছুটি পাচ্ছেন। যেখানে ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

চলুন জেনে নেই তুরস্কের প্রথম সারির কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম

১. মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা।

২. বোয়াজিসি ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল।

৩. ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল।

৪. আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা।

৪. গাজি ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা।

৫. মারমারা ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল।

৬. ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি।

৭. আনাদোলু ইউনিভার্সিটি, এস্কিশেহের।

৮. হাজিতেপে ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা।

৯. ডোকুজ এইলুল ইউনিভার্সিটি, ইজমির।

১০. এগে ইউনিভার্সিটি, ইজমির।

তাহলে প্রস্তুত থাকুন। উচ্চশিক্ষায় স্বাগতম।

সূত্র: ক্যাম্পাস লাইভ ২৪ ডট কম