ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্য শিক্ষার্থী না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির শর্ত শিথিল করছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী ‘ইলেকটিভ ইংলিশ’ অংশে নূ্যনতম পাস নম্বর ৮ পেয়েছেন তাদের ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বুধবার বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর দুপুর ১২টায় ভর্তি কমিটির সাধারণ সভায় ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা শিথিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কোনো আসনই ফাঁকা রাখা হবে না বলে জানান তিনি। এবার ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় ‘সাধারণ ইংরেজিতে’ ৩০ নম্বরের মধ্যে ২০ এবং ‘ইলেকটিভ ইংলিশে’ ১৫ পাওয়ার শর্ত দেয়া হয়েছিল। তবে ‘খ’ ইউনিট থেকে ‘ইলেকটিভ ইংলিশ’-এ মাত্র দুইজন পরীক্ষার্থী পাস করায় (নূ্যনতম ১৫ পাওয়ায়) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজিতে ভর্তির শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে। নতুন নিয়মেও যেসব শিক্ষার্থী সাধারণ ইংরেজিতে ২০ নম্বর পেয়েছেন তাদেরই ইংরেজিতে ভর্তির জন্য বিবেচনা করা হবে। ‘ইলেকটিভ ইংলিশ’ উত্তর দেননি এমন কেউ ওই বিভাগে ভর্তির জন্য বিবেচনায় আসবেন না। সাধারণ ইংরেজি অংশ বাদে অন্য সব অংশেই আলাদা আলাদা পাস নাম্বার ছাড়াও ইংরেজি বিভাগে ভর্তিতে এসএসসি ও এইচএসসিতে ২০০ নম্বরের ইংরেজি পড়ার শর্ত পূরণ করতে হবে। এবার ‘খ’ ইউনিট থেকে ১৭ জন শিক্ষার্থী ইলেকটিভ ইংলিশ-এ উত্তর দিয়ে মাত্র দুইজন নূ্যনতম ১৫ নম্বর পেয়ে ইংরেজিতে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেন। শর্ত শিথিল হলে ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ‘ইলেকটিভ ইংলিশ’ এ উত্তর দিয়ে নূ্যনতম ৮ নাম্বার পাওয়া ১৭ শিক্ষার্থীই ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পাবেন। এই বিভাগে এবার প্রথম বর্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে, যাদের ১২৫ জনই কলা অনুষদের অধীন ‘খ’ ইউনিট থেকে আসার কথা। বাকি ২৫ জনকে নেয়ার কথা ‘ঘ’ ইউনিট থেকে। উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘খ’ ইউনিট থেকে ইংরেজিতে ভর্তির যোগ্য শিক্ষার্থী পাওয়া না গেলে ‘ঘ’ ইউনিট থেকে তা পূরণ করা হবে। অর্থাৎ ‘ঘ’ ইউনিট থেকে ১৩৩ জন শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন। ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে ‘খ’ ইউনিটের অনুরূপ শর্ত রাখা হয়েছিল। একই শর্তে ‘ঘ’ ইউনিটে কতজন শিক্ষার্থী ‘ইলেকটিভ ইংলিশে’ নূ্যনতম পাস নাম্বার পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য প্রকাশ না করলেও অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলছেন, ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। এদিকে ইংরেজি বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করে সাধারণ ইংরেজিতে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি করতে ভর্তি কমিটিকে ইংরেজি বিভাগ একটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে বিভাগের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন। ওই বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক তাহমিনা আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের সুপারিশ ভর্তি কমিটির কাছে পাঠিয়েছি, এখন তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তবে বিভাগের পক্ষ থেকে কী সুপারিশ করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। ‘খ’ ইউনিটে ভর্তির জন্য ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত পছন্দক্রম পূরণের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। আর ১৯ অক্টোবর থেকে সাক্ষাৎকার শুরু হবে। বিভাগ পরিবর্তনের ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তির জন্য ১৬ অক্টোবর থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত পছন্দক্রম পূরণের সময়সীমা নির্ধারিত রয়েছে। শর্তের উল্লেখ ছিল নির্দেশিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার শুরুর দিনই ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য ‘ইলেকটিভ ইংলিশ’ অংশে উত্তর দেয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়া হয়। ১৪ আগস্ট প্রকাশিত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে চাইলে ইলেকটিভ ইংলিশ-এর উত্তর দিতে হবে।’ এ ছাড়া ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার দুই দিন আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সদরুল আমীন এক সংবাদ সম্মেলনে এ বছর ইংরেজিতে ভর্তির জন্য নতুন শর্তগুলো তুলে ধরেন। এই ভর্তি পরীক্ষা ত্রুটিপূর্ণ বলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের অভিযোগ নাকচ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও মন্ত্রীর অভিযোগ নাকচ করেছে। উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কৃত্রিম বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে, যার কোনো অবস্থান নেই। যত শিক্ষার্থী পাস করেছে তাদের সবাই-ই তো ভর্তির সুযোগ পাবে না।’ ‘শিক্ষার মান নিয়ে অতি সাধারণীকরণ’ করা হয়েছে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘জিপিএ-৫ পাওয়া সবাই সমান মেধাবী নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তার প্রমাণ হচ্ছে। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে আরো উন্নত করা যাবে না, তা নয়। তবে এটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি।’ শিক্ষামন্ত্রী তার নিজের মতো করে বিষয়গুলো দেখেছেন বলেও মনে করেন অধ্যাপক আরেফিন। জিপিএ-৫ পাওয়াদের ফেলের ছড়াছড়ি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ৭৫ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ হাজার ৪৭৮ জনই ফেল করেছেন। ফেলের হার ৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এসএসসি ও এইসএসসি উভয় বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়াদের মধ্যে ‘ক’ ইউনিটে ৩৫ হাজার ৯২৭ জন ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলেও ২৩ হাজার ৭৩ জন উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ‘খ’ ইউনিটে ৪ হাজার ৯৭০ জনের মধ্যে তিন হাজার ৬৬৩ জন এবং ‘গ’ ইউনিটে ৯ হাজার ৫৯৫ জনের মধ্যে পাঁচ হাজার ১৪৮ জন ফেল করেছেন। এ ছাড়া ‘ঘ’ ইউনিটে ২৪ হাজার ৮৩৪ জনের মধ্যে ১৮ হাজার ২০ জন এবং ‘চ’ ইউনিটে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ৬৩৮ জনের মধ্যে ৫৭৪ জনই ফেল করেছেন। এদিকে শুধু এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ‘ক’ ইউনিটে ৪১ হাজার ৩৪২ জনের মধ্যে ২৭ হাজার ৮১৩ জন এবং ‘খ’ ইউনিটে ১১ হাজার ৬২৯ জনের মধ্যে ৯ হাজার ২০৩ জন ফেল করেছেন। ‘গ’ ইউনিটে ১৮ হাজার ৮৪৫ জনের মধ্যে ১২ হাজার ২০৭ জন, ‘ঘ’ ইউনিটে ৩৬ হাজার ৯৯০ জনের মধ্যে ২৮ হাজার ১৭৭ জন এবং ‘চ’ ইউনিটে এক হাজার ৪৮ জনের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় ৯৬৬ জন ফেল করেছেন। এবার ‘ক’ ইউনিটে ২১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ‘খ’ ইউনিটে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ‘গ’ ইউনিটে ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ, ‘ঘ’ ইউনিটে ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ‘চ’ ইউনিট থেকে তিন দশমিক ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।
সৌজন্যে :যায় যায় দিন