কিছু কিছু শব্দ আছে যা সিভিতে ব্যবহার করলে আপনার সিভিটি ইন্টারভিউ কল করার জন্য কাউন্ট নাও করা হতে পারে। এগুলোকে বলা হয় সিভি কিলার। এরকম কিছু শব্দের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি-
এক. Can Do Any Work
অনেকেই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ বা অন্য জায়গায় লিখি ‘আমরা যেকোনো ধরনের কাজ করতে রাজি’। মনে রাখবেন, কোম্পানি যে পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে শুধু সে কাজকে ফোকাস করে ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ লিখবেন। সব কাজ জানা লোকের সিভি কোম্পানি আমলে নেয় না।
দুই. Is Required
অনেকের ক্যারিয়ার অবজেক্টিভে পাওয়া যায় যে, তার কাজ করার জন্যে ভালো পরিবেশ লাগবে। আপনার কি প্রয়োজন সেরকম যেকোনো শব্দ বা বাক্য বা বাক্যাংশ আপনার সিভিতে থাকলে নিশ্চিত থাকুন, আপনি কোনো ইন্টারভিউ কল পাবেন না। কোনো কোম্পানি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে নিয়োগ দেবে না। নিজেকে কাজের মাধ্যমে তুলে ধরুন।
তিন. Results-oriented professional
অনেকে মনে করেন, এরকম কিছু কমন মিষ্টি কথা লিখলেই বুঝি চাকরিদাতা খুব খুশি হয়ে যাবেন। সকলেই ফলাফলের উদ্দেশে কাজ করে। কিন্তু কাজ করার ক্ষেত্রে শুধু ফলাফলটুকুই বিবেচ্য হয়। বল প্রয়োগের পর বস্তুর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকলে তাকে কাজ করা বলে না, এর জন্য আপনি যত শ্রমই দিন না কেন এটা কাজ নয়। সুতরাং সিভিতে এরকম গদবাধা কিছু না লেখাই উত্তম।
চার. Seeking, Looking For, Searching
এই শব্দগুলো দ্বারা বোঝায় ‘চাওয়া’। শব্দগুলো এমন অর্থ প্রকাশ করে যেন আপনার কিছুই নেই, আপনি চাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। নিজের কাজ করার ইচ্ছেটা অধিকতর গুরুত্ব সহকারে সিভিতে লেখাই উত্তম।
পাঁচ. Securing
অনেকে নিরাপদ চাকরি খোঁজেন। কিন্তু তা কি বাস্তবে সম্ভব? তাই জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে শিখুন। যে চ্যালেঞ্জ নিতে জানে না, তার সিভি কখনোই কোম্পানি ভালো ভাবে নেয় না। কোম্পানিতে কিছু লোক আছেন যারা নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে চান ও নিজেদের গন্ডির বাইরে নতুন কিছু জানেন না, জানতে চানও না, পারেন না, করেনও না। এই ধরনের লোকেদের বলা হয় ক্যাশ কাউ। এক গোয়ালের গরু যেমন গোয়াল পরিবর্তন করলে দুধ দেয়া বন্ধ করে দেয়, তেমনি ক্যাশ কাউ প্রজাতির চাকরিজীবীদেরও কেউ সাদরে গ্রহণ করে না।
ছয়. Position
অনেকে কোম্পনিতে জয়েন করার আগেই পজিশনের কথা উল্লেখ করেন সিভিতে। আগে যে পোস্টে আবেদন করেছেন এই অনুযায়ী সিভি তৈরি করুন, এরপর জয়েন করুন। নিজের কাজ দ্বারা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করুন। পজিশন তখন এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে। তাই ধৈর্য ধরুন, আগে থেকেই পজিশন চাওয়ার ভুল করবেন না।
সাত. Bottom-line orientation
এর মাধ্যমে বোঝাচ্ছে আপনি আপনার চাকরিদাতার খুব ভক্ত। আপনি তার অনুগত থাকবেন এবং তাকে আরো টাকা পয়সা তৈরি করতে সাহায্য করবেন। কিন্তু আপনার কাজটা কী হবে, কী আপনার পরিকল্পনা, কী আপনার লক্ষ্য- এরকম কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য এখানে দেয়া নেই। কাজেই এটিও একটি অপ্রয়োজনীয় প্রলাপ।
আট. Works well with all levels of staff/Team worker
এই ধরনের কথাগুলো উনবিংশ শতাব্দীতে কাজে লাগতো, কিন্তু এখন এরকম শব্দের কোনো মূল্য নেই। আপনাকে সফল হতে হলে উচ্চ পর্যায়, নিজের কলিগ ও অধীনস্ত সকলের সাথে কাজ করতে হবে। এটা ছাড়া আপনি এমনিতেই এগোতে পারবেন না। একটি সিভি দেখতে একজন রিক্রুইটার ১৫ সেকেন্ড সময় খরচ করেন। কাজেই এই ১৫ সেকেন্ডে তার চোখে দরকারি তথ্যটি গেঁথে দিন।
নয়. Cross-functional teams
এই ফ্রেজটির মানে হচ্ছে ‘ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে ভিন্ন ভিন্ন লোকের একটি কমন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করা’। খুব স্বাভাবিক যে একদম উচ্চপদস্থ লোক ছাড়া এরকম কাজ করতে পারাটা বেশ কঠিন। অনেকে সিভি বড় করতে কিছু মিথ্যা তথ্যও জুড়ে দেন। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে চাকরিপ্রার্থী যেকোনো কাজ করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে এরকম শব্দমালার ব্যবহার নতুনদের সিভিতে থাকলে তাকে আর ইন্টারভিউতে ডাকার জন্যে বিবেচনা করা হয় না।
দশ. More than [x] years of progressively responsible experience
ধরুন, আপনার ৯ বছরের অভিজ্ঞতা। অনেকে সাড়ে নয় বছরের অভিজ্ঞতা একটু জোরদার আকারে জানাতে লিখে ফেলেন নয় বছরের চেয়েও বেশি। কিন্তু এই বেশি মানে তো ১০ বছর নয়। তাই, অযথা এরকম শব্দের ব্যবহার মানবসম্পদ বিভাগের অভিজ্ঞ লোকেরা খুবই অপছন্দ করেন।
এগারো. Superior (or excellent) communication skills
স্মার্ট লোকেরা নিজেদের কাজের মাধ্যমেই নিজেদের যোগ্যতা প্রকাশ করেন। তারা কখনো উল্লেখ করেন না যে তাদের যোগাযোগের দক্ষতা ভালো। তাদের কাজই তাদের দক্ষতার প্রতিফলন ঘটায়।
বারো. Strong work ethic
এগুলো তেলমারা ধরনের কথা দেখলেই বোঝা যায়। এই ধরনের কথা সিভিতে উল্লেখ থাকলেই যে আপনি খুব ভালো হয়ে যাবেন ব্যাপারটা তা কিন্তু নয়। বরং এসব গদবাঁধা কথা আপনার সিভিকে দুর্বল ও ফেলনা করে তোলে।
তেরো. Proven track record of success
এগুলোও চাপাবাজদের সস্তা কথা। চাকরির বাজারে এসব কথা সকলেই বলে। আসলে এগুলো অনেকটা মিথ্যা প্রচারের মত।
সিভিতে কোনো ভাবেই কোনো ভুল তথ্য দিবেন না। মিথ্যা তথ্য ধরা পড়লেও আপনি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা হারাবেন।