দরকারি ডকুমেন্টের মধ্যে অন্যতম জাতীয় পরিচয় পত্র বা ন্যাশনাল আইডি। প্রাথমিকভাবে একে ভোটার আইডি কার্ড বলা হলেও বর্তমানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে পাসপোর্ট বানানো কোথায় নেই এর ব্যবহার। ফলে চুরি বা হারিয়ে যাওয়া ঠেকাতে এর জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। তা সত্ত্বেও এমন বিপত্তিতে অনেকেই পড়েছেন। এখানে আমি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা আপনাদের কাজে লাগতে পারে। তার আগে বলে রাখি, জাতীয় পরিচয় পত্রের কয়েকটি ফটোকপি সবসময় ঘরে রাখুন।
১. প্রথম কাজ করা হল- থানায় জিডি করা। এখানে দুটো বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত, জিডির আবেদনপত্র এ ফোর কাগজে বাসা থেকে লিখে নিয়ে যেতে পারেন। অযথা থানায় গিয়ে জিডির ফর্মের জন্য বলা বা লেখার দরকার নাই। দ্বিতীয়ত, আবেদনপত্র দুই কপি জমা দিতে হবে। একটি থানায় থাকবে, আরেকটি সিল মেরে আপনাকে দিয়ে দেবে।
২. এবার জিডির কপির সঙ্গে আপনার কার্ডের একটি ফটোকপি নিয়ে আগারগাঁও আইডি কার্ড অফিসে চলে যান। এটি পাসপোর্ট অফিস থেকে ৫-৭ মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে অবস্থিত। ইসলামী ফাউন্ডেশন বললেই যে কেউ দেখিয়ে দিবে। সেখানে নিচতলায় রিসিপশন ডেস্কে গিয়ে জিডির কপি এবং কার্ডের ফটোকপি জমা দিন। এখানে এক পৃষ্ঠার একটি আবেদনপত্র ওই দুটি কাগজের সঙ্গে স্ট্যাপলার যুক্ত করে দিবে। আবেদনপত্রটি খুবই সাদামাটা এবং পূরণ করতে ২-৩ মিনিটের বেশি লাগবে না।
৩. এবার আটতলায় (লিফটে ৭) চলে যান। সেখানে কয়েকটা লাইন আছে। একটা লাইন হারানো কার্ডের জন্য। সেখানে দাঁড়িয়ে যান। লাইন সাধারণত খুব বড় হয় না। কাউন্টারে ডকুমেন্ট তিনটি সাবমিট করুন। ওরা চেক করবে কম্পিউটারে। আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার কথা না। (তবে আপনার সামনে যিনি ছিলেন তাকে তার মায়ের নাম জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। আর আমার মনে হয় এ প্রশ্নটার উত্তর আপনি দিতে পারবেন!) এখানে সবকিছু রেখে আপনাকে ছোট্ট একটা চিরকুট (নিচতলায় থেকে পাওয়া ফর্মের একটা অংশ) ধরিয়ে দেবে। যেখানে লেখা থাকবে কবে আপনি কার্ডটা তোলার জন্য কবে আসবেন। এবার বাসায় এসে নির্দিষ্ট দিনের জন্য অপেক্ষা করুন। আমার কার্ড দেওয়ার জন্য চার দিন সময় চেয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হয়ে কার্ড সংগ্রহ করেছি। তবে নির্ধারিত তারিখের সাত দিনের মধ্যে সংগ্রহ না করলে বাড়তি ঝামেলায় পড়তে পারেন।
অন্যান্য বিষয়াদি
১. সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়। ১২টার পরে গেলে কোনোভাবেই আবেদনপত্র জমা নেবে না। তাই সময়মতো উপস্থিত হন।
২. আমি ভিড় পাইনি বলে আপনিও পাবেন না এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। তাই প্রথম দিকে চলে যাওয়াটায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৩. আগারগাঁও অফিসে নতুন কার্ডের জন্য টাকা নেওয়া হয় না। কেউ পয়সা চেয়ে বসলে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করুন। নিচতলায় দেখবেন বড় ব্যানারে লেখা আছে কার্ড সংশোধন বা নতুন কার্ড তোলার জন্য কোনো পয়সা নেওয়া হয় না এবং এ রকম কিছু ঘটলে যেন কর্তৃপক্ষকে জানান হয়।
৪. যদি আপনার কার্ডের ফটোকপি না থাকে তাহলে অন্তত কার্ড নাম্বারটা থাকলেও চলবে। কিন্তু যদি সেটাও আপনার না থাকে তাহলে মনে হয় বেশ ঝামেলায় পড়বেন। তাই কার্ডের ফটোকপি বা সফটকপি সংরক্ষণ করুন।
৫. কার্ড সংক্রান্ত অন্য যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে অফিসে চলে যান। ওরা প্রয়োজনীয় তথ্য দেবে। ওয়েবসাইটে ওদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। কিন্তু আমি বার বার ফোন করেও কোনো সাড়া পাইনি।
৬. আমি গাজীপুর থেকে কার্ড করেও কিন্তু আগারগাঁও অফিস থেকে সার্ভিস পেয়েছি। সুতরাং যারা ঢাকার বাইরের মানুষ কিন্তু ঢাকায় থাকেন, আপনাকে দেশের বাড়ির লোকাল আইডি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে না। যদি না ব্যতিক্রমী কোনো ঝামেলা থাকে।
তথ্য: শহীদুল মিশু somewhereinblog