১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেন আর নেই।
সোমবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে। জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে। তার বাবা মুজিবুল হক। ছেলেবেলায় মইনুল চেয়েছিলেন প্রকৌশল বিষয়ে পড়ালেখা করতে। ঢাকা তখন গণঅভ্যুত্থানে উত্তপ্ত। ওই সময় মইনুলকে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
১৯৭০ সালে তিনি ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে। বাউণ্ডেলে স্বভাবের মাইনুল সুযোগ পেলেই চলে যেতেন এথায়-সেথায়।
১৯৭১ সালে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ হয়ে যায় বুয়েটে। মইনুল তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীর দামপাড়া গ্রামে আশ্রয় নেন। খুব কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করেন তিনি।
১৬ ডিসেম্বরের পর সৈয়দ মইনুল হোসেন ফিরে যান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসে। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীতে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি আর্জন করেন। ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে ইএএইচ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে জুনিয়র স্থপতি হিসাবে যোগ দেন। কয়েক মাস পর চাকরি ছেড়ে ওই বছরের আগস্টে যোগ দেন বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে।
পরে তিনি স্থপতি সংসদ লিমিটেড, শহীদুল্যাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং কুয়েতের আল ট্রুট লিমিটেডে কাজ করেন।
১৯৭৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সৈয়দ মইনুল হোসেন ৩৮টি বড় বড় স্থাপনার নকশা করেন। এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, আইআরডিপি ভবন কাওরানবাজার, ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন, চট্টগ্রাম ইপিজেড, বাংলাদেশ চামড়াজাত প্রযুক্তির কর্মশালা ভবন, উত্তরা মডেল টাউন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার খাদ্য গুদামের নকশা, কফিল উদ্দিন প্লাজা, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস ভবন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের নকশা করেছেন তিনি।