রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর ইডেন কলেজ, লালমাটিয়া কলেজ ও সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজ কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে অনেক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোর কাছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ইডেন কলেজে পরীক্ষা দেওয়া এক ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়; যিনি স্বীকার করেন পরীক্ষা শুরুর ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগেই তিনি প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন।
তবে এই পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সত্যি নয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের এক ছাত্র ওই হলের একটি কক্ষ নম্বর দিয়ে অভিযোগ করেন, এই কক্ষের ছেলেরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। তিনি পরীক্ষা শুরুর আগে কয়েকজনের হাতে অঙ্কের উত্তর দেখেছেন। পরে জানতে পারেন সেগুলোই পরীক্ষায় এসেছে।
আবদুস সোবহান নামের এক পরীক্ষার্থী একটি সুনির্দিষ্ট রোল নম্বর দিয়ে বলেন, এই পরীক্ষার্থী একটি অঙ্ক করে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রশ্নপত্র ফাঁস না হলে ওই ছেলে জানলেন কী করে এই অঙ্ক পরীক্ষায় আসবে?
পল ওয়াকার নামের একজন পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে লিখেছেন, জনতা ব্যাংকের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। চারটা অঙ্ক সবার মুখে মুখে।
মাহমুদুল হাসান নামের এক পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানান, তিনি লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ৩১০ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সেখানে দুজনকে দেখেছেন যাঁরা টিস্যু পেপারে আগে থেকেই উত্তর লিখে নিয়ে এসেছেন।
শেখ সোহেল নামের এক পরীক্ষার্থী বলেন, বিকেল তিনটায় একজন চারটি অঙ্ক ও একটি অনুবাদের ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলেন। পরীক্ষায় হুবহু সেগুলো এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একজন কর্মী জানান, বেলা দুইটার দিকে জসীম উদ্দিন হলের একজন প্রশ্নসহ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তিনি মামলার ভয়ে সেটা ডিলিট করে দিয়েছেন। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন এই প্রশ্নগুলোই এসেছে।
কবির হোসেন নামের আরেক প্রার্থী একটি রোল নম্বর দিয়ে বলেন, এই ছেলে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে পরীক্ষার হলে আসেন। ছেলেটি পরীক্ষা শেষে জানিয়েছেন সকালেই তিনি প্রশ্ন পেয়েছিলেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা এখন ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে আজ রাতে এই কমিটির একজন সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইডেন কলেজে পরীক্ষা দেওয়া একজন ছাত্রের কাছে হাতে লেখা কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছিল। পরীক্ষার হলে থাকা কয়েকজন ছেলে দায়িত্বরত শিক্ষকদের বিষয়টা জানালে ওই শিক্ষকেরা এসে ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ছেলেটি জানায়, পরীক্ষা শুরুর ২০ থেকে ২৫ মিনিট আগে তিনি প্রশ্নপত্র পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে পারবে। কারণ তারাই এই পরীক্ষা নিয়েছে।
জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সত্যি নয়। কারণ পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রগুলোতে প্রশ্ন গেছে। পরীক্ষার ঘণ্টা পরার পর শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র খুলে বিতরণ করেছেন। কাজেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তবে পরীক্ষা শুরুর পর মোবাইল বা কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে সেটি অন্য জায়গায় যেতে পারে। এত ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দেয় যে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। তবে আমরা খাতা মূল্যায়নের সময় বিষয়টি বুঝে যাব। তখন আমরা বিষয়টা দেখব।’
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ৮৩৪টি পদের বিপরীতে জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা বা এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। এই পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। গত ২৪ মার্চ সকাল ও বিকেলে প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আড়াই লাখ প্রার্থী তাতে অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ১৫০ জন। শুক্রবার নয় হাজার ৪০০ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন।
সূত্র: প্রথম-আলো