মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) এ আদেশ দেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্টের তলবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রাজধানীর স্কুলগুলোর প্রধান ও সভাপতিরা হাজির হলে এ আদেশ দেন আদালত।
হাইকোর্ট আরও আদেশ দিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদায় করা বাড়তি ফি যারা ফেরত দেবে না, সেসব স্কু্লের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি বাতিল করা হবে। বাতিলকৃত কমিটির সদস্যরা আগামী তিন বছর কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বা মনোনীত হতে পারবেন না।
হাইকোর্টের আদেশেও বাড়তি ফি আদায় বন্ধ না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে রাজধানীর ২৬টি স্কুলের প্রধান ও কমিটির সভাপতিদের তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই ২৬টি স্কুলের মধ্যে ৬টি স্কুল ইতোমধ্যেই আদায় করা বাড়তি ফি ফেরত দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে হাজির হন স্কুলগুলোর প্রধান ও সভাপতিরা। তাদের মধ্যে ছিলেন ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর একই বেঞ্চ তাদের তলব করেন। মঙ্গলবার আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
২৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আলীমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় ও জান্নাত একাডেমি, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফায়দাবাদের দ্য চাইন্ড ল্যাব. স্কুল, উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, আজমপুরের হাজী মিল্লাত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, লালবাগের রায়হান কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি, ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল, আর্মানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নিউমার্কেটের গভর্নমেন্ট ল্যাব. হাইস্কুল, ওয়াইডব্লিউসিএ স্কুল, হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এগুলোর মধ্যে ছয়টি স্কুল ইতোমধ্যেই আদায় করা বাড়তি ফি ফেরত দিয়েছে। গত বছরের ১০ নভেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘আট গুণ বাড়তি ফি আদায়’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে বাড়তি ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
ওই পত্রিকার প্রতিবেদনের বিষয়ে ১৪ ডিসেম্বর তাদের আইনজীবী হলফনামা দাখিল করলে আদালত সংশ্লিষ্টদের তলব করেন।
ওই পত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরার দ্য চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্রী মাহফুজার কাছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণ বাবদ চেয়েছে ১১ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের অসচ্ছল পরিবারের পক্ষে এ অর্থসংস্থান করা সম্ভব নয়। তাই নালিশ জানাতে এসেছে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে।
ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ টাকা। কিন্তু এর বাইরেও বড় অংকের ফি আদায় করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। অনেকে অভিযোগ করেছেন, চাহিদামতো অর্থ না দিতে চাইলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করছেন। তারা এর প্রতিকার চান।
রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরম পূরণের টাকার সঙ্গে ৩ মাসের বেতন, সেশন, কোচিং, মডেল টেস্ট ফি ইত্যাদি মিলিয়ে মনিপুর হাইস্কুলে সাড়ে ৯ হাজার টাকা, মিরপুর জান্নাত একাডেমি হাইস্কুলে ৭ হাজার ৭০০ টাকা, আলীমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ হাজার ৯০০ টাকা, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাড়ে ৪ হাজার টাকা, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৫ হাজার টাকা, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল হাইস্কুলে ৫ হাজার ৯০০ টাকা, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৫ হাজার টাকা, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪ হাজার ৭৯০ টাকা, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে ৬ হাজার ৬৫২ টাকা, রামপুরা একরামুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৫০০ টাকা, মগবাজার নজরুল শিক্ষালয়ে ৮ হাজার টাকা, বাসাবোর কদমতলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯ হাজার টাকা, সদরঘাটের পোগোজ স্কুলে ৬ হাজার টাকা, হাটখোলার মিতালী বিদ্যাপীঠ স্কুলে সাড়ে ৬ হাজার টাকা, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ হাজার টাকা, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৭০০ টাকা, রামপুরা একরামুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এর বাইরে এসব স্কুলের পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণ বাবদ বিভাগ ভেদে ১ হাজার ৫৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬৭০ টাকা বাড়তি দিচ্ছে।