এবার বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপতে যাচ্ছে সরকার। দেশের ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৪৮৫ ছাত্রছাত্রী এ বই পাবে। আগামী বছরের (২০১৬ শিক্ষাবর্ষ) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যই বইগুলো ছাপা হচ্ছে। এ পরিমাণ বই ছাপতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এরই মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই মুদ্রণের দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের দরপত্র আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আহ্বান করবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, ছাত্রছাত্রীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে সারাবিশ্বে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরে (২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ) বিনামূল্যে সারাদেশে মোট বই বিতরণ করা হয়েছে ১৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১২৩ কপি। এর সুফলও মিলেছে।
গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী বেড়ে গেছে ১ কোটি ৬৮ লাখেরও বেশি। প্রতি বছরই শিক্ষার্থী বাড়তে থাকায় পাঠ্যবই মুদ্রণের সংখ্যাও বাড়ছে। আবার পাঠ্যবই বিতরণের কারণে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লিঙ্গ সমতা অর্জিত হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে বরং ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা এখন বেশি।
এনসিটিবি সূত্র জানায়, এবার ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপতে সরকারকে কাগজ কিনতে হবে ১৯ হাজার টন। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এরই মধ্যে কাগজ কেনার বিষয়টি অনুমোদন করেছে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল জানান, এর বাইরেও মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ,সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর) বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজি ব্যাকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), শারীরিক শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতিসহ মোট ৩৭টি বিষয়ের বইয়ের জন্য আরও ১২০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এবার এই ৩৭টি বিষয়ের মোট ৯ কোটি পাঁচ লাখ কপি বই ছাপা হবে বলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের একাধিক সূত্র জানায়, এবার বেসরকারিভাবে কেনা প্রতি টন কাগজের দাম পড়ছে প্রায় ৬৪ হাজার টাকা। আর দরপত্র ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) থেকে কেনা হবে আরও তিন হাজার টন কাগজ, যার দাম পড়বে টনপ্রতি প্রায় ৯৮ হাজার টাকা। এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোশতাক আহমেদ ভূঁইঞা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ কেনা বাধ্যতামূলক।
বরাবরের মতো এবারও প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দরপত্রে। অর্থাৎ দরদাতা প্রতিষ্ঠান নিজেরাই কাগজ কিনে বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করবে। এনসিটিবি কেবল বই ও কাগজের গুণগত মান এবং সরবরাহ কার্যক্রম তদারকি করবে। তবে প্রাথমিকের বই ছাপা নিয়ে বেঁকে বসেছেন মুদ্রাকররা। প্রেস মালিকরা বলছেন, পাঠ্যবই ছেপে দিনের পর দিন বিলের জন্য তাদের ঘুরতে হয় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালের।
জানা গেছে, গত বছরের বই মুদ্রণের বিল তারা এখনও পাননি। এ নিয়ে ১৯ মে এনসিটিবিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় তীব্র ক্ষোভ জানান প্রেস মালিকরা। তাদের দাবি, কার্যাদেশ যেহেতু এনসিটিবি দেয়, বিলও তাদেরই দিতে হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২০১৫ সালে দেশের প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের চার কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থীর হাতে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি চাররঙা নতুন বই তুলে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আগামী শিক্ষাবর্ষে গড়ে মোট ৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বেশি ধরে নিয়ে বই ছাপা হবে। এতে ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৩৫ কোটি কপি পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে বলে জানান পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (পাঠ্যবই) অধ্যাপক ড. ইনামুল হক সিদ্দিকী (রতন সিদ্দিকী)।
এদিকে, এনসিটিবির দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞাপন প্রচার নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সংস্থাটির একটি চক্র সম্প্রতি আন্ডারগ্রাউন্ড ভুঁইফোড় ও সরকারবিরোধী কিছু প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছে। এতে যথাসময়ে দরপত্র সম্পর্কে জানতে না পেরে সরকার সমর্থক অনেক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান বই ছাপার দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি। জোরালো এ অভিযোগ ওঠার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় লিখিত ব্যাখ্যা চেয়েছে এনসিটিবির কাছে।