পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার অচল হয়ে পড়ছে সরকারি কলেজ। অষ্টম পে-স্কেলে সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। একই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি পালনের কারণে কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ডাকে আজ মঙ্গলবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষক নেতাদের অভিযোগ, শিক্ষা ক্যাডারের পদসমূহ ২য় ও ১ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়টি অষ্টম পে-স্কেলে নেই। এর আগে শিক্ষা ক্যাডারের ৫ম গ্রেডের সহযোগী অধ্যাপকরা পদোন্নতি পেয়ে ৪র্থ গ্রেডের অধ্যাপক হতেন। সেখান থেকে ৫০ শতাংশ অধ্যাপকরা সিলেকশন গ্রেড পেয়ে ৩য় গ্রেডে উন্নীত হতে পারতেন। কিন্তু নতুন বেতন কাঠামোয় উচিত ছিল এই বৈষম্য নিরসন করে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্য থেকে গ্রেড-১ নিশ্চিত করা। তা না করে উল্টো সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় অধ্যাপকদের ৪র্থ গ্রেড হতেই ‘অসম্মানজনকভাবে’ অবসরে যেতে হবে। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় এসব পদমর্যাদা ও বেতনক্রম অবনমনের প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।
দাবি পূরণে সরকারকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও দাবি আদায় না হওয়ায় ৪ ও ৫ জানুয়ারি পরীক্ষা বর্জনসহ পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। এরপর ১১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। দাবি আদায়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে ৪ ধাপের তিন দিনব্যাপী পূর্ণদিবস কর্মবিরতি। এর ফলে সব সরকারি কলেজে তালা ঝুলছে। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ৩১০টি সরকারি কলেজ, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ ও চারটি সরকারি মাদ্রাসাই আলিয়া রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৫ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ ৬৩৪টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৪০৩টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২১৪টি ও প্রভাষকের পদ সাত হাজার ৯৯৫টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগম জাগো নিউজকে বলেন, সপ্তম পে-স্কেলে অধ্যাপকদের ৫০ শতাংশ গ্রেড-৪ থেকে গ্রেড-৩ এ যেতে পারতেন। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড বন্ধ করে দেয়ায় এ পথ রুদ্ধ হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করায় প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেননা অনেক বিষয়েই নিয়মিত পদোন্নতি নেই। এসব শিক্ষক পদমর্যাদা না পেলেও সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিপূরণ করতে পারতেন। কিন্তু অষ্টম পে-স্কেলে এসব রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষকরা আজ আন্দোলনে নেমেছেন।
প্রসঙ্গত, তিন দিনের কর্মবিরতির পর দাবি আদায় না হলে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করবেন। এরপরও দাবি পূরণ না হলে ১৩ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন। ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন কলেজ শিক্ষকরা।
সূত্র: জাগো নিউজ ২৪ ডট কম