এখনো কলেজ পায়নি ৫২ হাজার শিক্ষার্থী

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের পরও সারা দেশের ৫২ হাজার ১২৪ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী কোনো কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়নি। ফলে তারা ও তাদের অভিভাবকেরা ভর্তি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। এ ছাড়া তাদের ভালো মানের কলেজ পাওয়ার সুযোগও খুব কম।
edu
অবশ্য শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সব শিক্ষার্থীর ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। দ্বিতীয়বার সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের আবার অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৮৫০ জন। সোমবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এবার ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে ১০ হাজার ৭২৬ জন। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজির (আইআইসিটি) সহায়তায় এই তালিকা প্রকাশ করছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর বলেন, দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের পাশাপাশি কলেজ পরিবর্তন (মাইগ্রেশন) করা হয়েছে ৬ হাজার ৯২১ জনের।
কলেজ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিল প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় দফায় মনোনীত ও কলেজ পরিবর্তনের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার ভর্তি হতে হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফায় মনোনীত না হওয়া শিক্ষার্থীরা পছন্দক্রম হিসেবে যেসব কলেজের নাম দিয়েছিল, সেই পছন্দক্রমের ভিত্তিতেই আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে দ্বিতীয় দফায় মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিকা করা হয়েছে। www. xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটে মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিকা দেখা যাবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, প্রথম দফায় মনোনীত না হওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু এসব কলেজে আবেদনের তুলনায় আসন নেই। প্রথম দফায় ভর্তির পর দেখা যায়, এসব কলেজে আসন শূন্য হয়েছে খুব কম। ফলে অনেক শিক্ষার্থী দ্বিতীয় মেধাতালিকায় মনোনীত হয়নি। তবে এখন তাদের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে শূন্য আসন থাকা কলেজ দেখে ভর্তির জন্য নতুন করে আবেদন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে।
সোমবার রাতে ভর্তির ওয়েবসাইটে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, ভর্তির জন্য এখনো মনোনীত না হওয়া শিক্ষার্থীরা ৯ ও ১০ জুলাই সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারবে। আবেদন করার জন্য তাদের আগের আবেদন আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও বুয়েটের আইআইসিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো মনোনীত না হওয়া শিক্ষার্থীদের খুব ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ একেবারে কম। কারণ, দ্বিতীয় তালিকার পর খুব ভালো কলেজে কার্যত আর কোনো আসন শূন্য নেই। তাই এসএসসিতে ফল ভালো হলেও তাদের এখন অপেক্ষাকৃত কম ভালো বা ভালো মানের নয়—এমন কলেজে ভর্তি হতে হবে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, ৬২ হাজার ৮৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশের এসএসসির ফলই ভালো। তারা প্রায় সবাই সেরা মানের কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিয়েছিল। এ কারণেই তাদের জন্য এই অনিশ্চয়তা এবং খুব ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারার সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। যেমন ঢাকা কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ১ হাজার ১৫০টি। অথচ আবেদন করেছে ১৫ হাজার ১১০ জন। উত্তরা রাজউক মডেল কলেজে আবেদন করে ১৮ হাজার ৩৪৪ জন। অথচ আসন অনেক কম। সব ভালো কলেজের ক্ষেত্রেই ছিল এমন চিত্র। ফলে খুব ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরাই এসব কলেজে সুযোগ পেয়েছে।
চার দফায় সময় বাড়িয়ে গত ২৮ জুন মধ্যরাতের পর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই তালিকা প্রকাশের পর থেকে এতে বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি বের হতে থাকে। অস্তিত্বহীন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত করা, কোটা সমস্যা, মেয়েদের কলেজে ছেলেদের মনোনীত করা, বাণিজ্যের শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান কলেজে মনোনীত করা, আবেদন না করলেও দূর-দূরান্তের কলেজে মনোনীত করাসহ বিভিন্ন ভুলের কারণে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের পরও সমস্যা রয়ে গেছে। এখনো সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তার পাশাপাশি হতাশায় রয়েছে।
এবার সারা দেশে মোট ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছিল। এর মধ্যে প্রথম দফায় ১০ লাখ ৯৩ হাজার জন মনোনীত হয়। এদের মধ্যে সোমবার পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৩২ হাজার জনের ভর্তির তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।