সদ্য এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে ইমেজ সঙ্কটে পড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি বৈঠক করে ইমেজ উদ্ধারে করণীয় নির্ধারণ করেছে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ডাকে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, অধিদফতর এবং অন্তত তিন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার (০৪ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা শিক্ষামন্ত্রীর হেয়ার রোডের বাসায় বৈঠক করে করণীয় ঠিক করেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষামন্ত্রী একাদশ শ্রেণির চলমান ভর্তি সঙ্কট কাটাতে করণীয় এবং মন্ত্রণালয়ের ইমেজ উদ্ধারে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখবেন। বৈঠক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রথমবার সারা দেশে একযোগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থীর অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট আলোচনা হয়। শিক্ষামন্ত্রী চেয়েছিলেন যেসব কলেজে ৩০০ আসন আছে সেখানে অনলাইনে ভর্তি করানো হোক। কিন্তু শিক্ষাসচিব ঢালাওভাবে সব কলেজে অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেন।
শিক্ষামন্ত্রীর সই করা মন্ত্রণালয়ের গোপনীয় নথি কীভাবে ফাঁস হয়- তা নিয়ে সচিব বৈঠকে মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কিছু কর্মকর্তাকে দোষারোপ করেন। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়ার ত্রুটি নিয়ে সমালোচনাকারী সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করেন সচিব। শিক্ষাসচিবের ভাষায়, তারা অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন চায় না।
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাসচিবকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন কীভাবে ভোগান্তি লাঘব করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বুয়েটের আইআইসিটি। শিক্ষাসচিবসহ সংশ্লিষ্টরা বুয়েটে অবিরাম কাজ করছেন বলে জানানো হয়। বৈঠকে বুয়েটের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে আলোচনা করে ভর্তি ত্রুটি সরানোর নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী।
পাশাপাশি অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইমেজ পুনরুদ্ধারে শিক্ষামন্ত্রী রোববার (০৫ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেবেন যে, ভর্তি নিয়ে কোনো সঙ্কট থাকবে না। প্রয়োজনে ভর্তির সময় আরও বাড়ানো হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। চার দফা পিছিয়ে গত ২৮ জুন মধ্যরাতে একাদশে ভর্তির মনোনীতদের প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। ১১ লাখ ৫৭ হাজার ২২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ জন মনোনীত হয়। প্রার্থীদের অন্য বিভাগে মনোনয়ন, বিভাগ না থাকলেও সেই কলেজে মনোনয়ন- এরকম নানা সমস্যা রয়েছে।
এসব সমস্যা নিয়ে প্রথম দফায় ২ জুলাই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেও শুক্র-শনিবারও ভর্তির সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কলেজে ভর্তির বাইরে আছে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ডসমূহে এ নিয়ে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। শিক্ষাসচিব বৈঠকের বিষয়ে সকালে জানালেও তিনি বিস্তারিত বলেননি। বৈঠকের পর তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। শিক্ষামন্ত্রীও ফোন রিসিভ করেননি।
বৈঠকে উপস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড এবং মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তারা তিনজনই বাংলানিউজকে বলেন, বৈঠকে ভর্তির অগ্রগতি জানানো হয়েছে। শুধু এটুকু লেখেন ভর্তিতে সমস্যা থাকবে না। বাকীটুকু শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী স্বাক্ষরিত কর্মসূচিতে জানানো হয়, রোববার সকাল ১০টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি সম্পর্কিত বিষয়াদি’ নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন।