আপনার প্রত্যেকটা মুহুর্ত মূল্যবান

শিক্ষার সঙ্গে আগ্রহের একটা নিবিড় সমপর্ক রয়েছে। শিক্ষাকে কার্যকর করতে হলে শিক্ষণীয় বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর শিখতে না চাওয়ার ব্যাপারে দেখা গেছে আত্মবিশ্বাসের অভাব, বিষয়ের প্রতি উৎসাহের অভাব, ভীতি এবং নিয়ম-নিষ্ঠার অভাব। ইচ্ছা করলে খুব সহজেই এগুলো পাশ কাটিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া সম্ভব।

773070-bullying-school-sad-student-depressed

 

লেখাপড়াকে ভয় করলে লেখাপড়ায় ভালো করা যায় না। কোনো শিক্ষার্থী যদি প্রথমেই ধরে নেয় যে এসব বিষয়ে পাস করা বা এর চেয়ে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়, তাহলে সত্যিই এটা হবে না। এবার নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করো, সহপাঠীরা যা পারবে তা তোমার না পারার কারণ কী থাকতে পারে। পড়াশোনার ক্ষেত্রে যতক্ষণ বোঝা যাচ্ছে না, ততক্ষণ কঠিন; বুঝতে পারলেই সহজ। বোঝার জন্য রয়েছে অনেক সময়। আগের ক্লাসের চেয়ে বর্তমান ক্লাসের পাঠ্যসূচি একটু কঠিন।

এই সময়ের মধ্যে তোমার ধারণা বেড়েছে, বেড়েছে পড়াশোনার ক্ষমতাও। তাই পড়া নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর্থিক অসচ্ছলতা, প্রতিকূল পরিবেশ থাকার পরও ড. আতিউর রহমান আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হয়েছেন। তিনি যখন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র নতুন শ্রেণীতে বই কেনার টাকা ছিল না। তাঁর মন পড়ে থাকত বইয়ের পাতায়। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা, অনুমতির বিনিময়ে ভর্ৎসনা। শুনতে হলো-সবাইকে দিয়ে লেখাপড়া হয় না। কিন্তু পরীক্ষা তো দিতে হবে। ভেতরে জেদ। সহপাঠীর সহযোগিতায় পরীক্ষা দিলেন। চতুর্থ শ্রেণীতে প্রথম স্থান। সংকট কাটেনি। তাঁরাও থেমে থাকেননি।

অষ্টম শ্রেণীতে ক্যাডেট কলেজ থেকে পদে পদে লড়াই করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন। লেগে থাকা এক মস্ত বড় গুণ। যে বিষয়টা পড়তে সহজ, ভালো লাগে শুধু সে বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে অন্য বিষয়গুলোর ওপর অবিচার করা হবে। ওগুলোতে নম্বর কমে যেতে পারে। বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল নিরূপণের কারণে সব বিষয়েই সমান গুরুত্ব দিতে হবে তোমাকে।

প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা বাড়িতে লেখাপড়া করার বিষয়টি মাথায় রেখে সিলেবাস অনুসারে রুটিন করে নাও। যেখানে ছুটির দিন ছাড়াও বিকেলে, সপ্তাহের একটি সন্ধ্যা আলাদা করে রাখতে পারো অন্য কিছু করার জন্য। কিন্তু রুটিন ভাঙা চলবে না। নিজের সদিচ্ছা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে রুটিন ধরে রাখবে। ‘পড়ার সময় পড়া আর ছুটির সময় আনন্দ’-এই নীতিটা মেনে চলবে। সময়টা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর এই পরিকল্পনা যদি আগে থেকেই তৈরি করে নাও তাহলে যেকোনো কাজ সঠিকভাবে শেষ করতে পারবে।

লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বপ্ন দেখাটা জরুরি। ধরো তুমি ডাক্তার হতে চাও। কল্পনা করো, বিরাট এক হাসপাতালে কাজ করছ, দেশজোড়া খ্যাতি। রোগীরা দূর থেকে ভিড় জমিয়েছে। এটা তোমার মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। লক্ষ্য পূরণের আকাঙ্ক্ষা বাড়বে। আর সেই সঙ্গে বাড়বে চেষ্টা। যেসব শিক্ষার্থী স্মৃতিশক্তি নিয়ে অল্পতেই হতাশ হয়ে যাও তারা পৃথিবীর বিখ্যাত মনীষীদের জীবনকথা পর্যালোচনা করে দেখতে পারো।

যেমন-বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী জার্মানির আইনস্টাইন। স্মৃতিশক্তি কমের কারণে যার পড়া শুরু করতেই নয় বছর লেগেছিল, প্রথম বার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেন। এন্ট্রান্স পরীক্ষায়ও তিনি প্রথম বার ফেল করেন। পরে এন্ট্রান্স পাস করে স্মরণশক্তির স্বল্পতার কারণে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে রাজি হননি। অতঃপর চাকরির পরীক্ষা দিয়েও ব্যর্থ হন। কারণ ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে কোনো প্রশ্নের উত্তর মনে আসে না, ভুলে যান। স্মৃতিশক্তি নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়েন।

অন্তর থেকে তাগিদ অনুভব করেন। মাত্র দুই বছরের সাধনায় অসাধারণ উন্নতি ঘটালেন। তারপর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। ২০ বছরের মাথায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন, বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন স্মৃতিশক্তি-স্বল্পতার কারণে প্রথম দিকে স্কুলের খারাপ ছাত্র থেকে সাধনার বলে সেরা ছাত্র হন। এ রকম অসংখ্য মনীষীর জীবনী পড়ে উৎসাহ পেতে পারো।