পুরো নাম আসিফ করিম আলিফ। জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী। তার দুই হাতের কবজি ও দুই পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ নেই। হাত-পা নেই বলে কিন্তু থেমে যায়নি আলিফের পথচলা। এবার জেএসসি পরীক্ষায় অন্য স্বাভাবিক ছাত্রদের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছে সে। প্রতিবন্ধী ভেবে দমে থাকার পাত্র নয় আলিফ। দুই হাত ও দুই পা ছাড়াও যে এই সমাজে বেঁচে থাকা যায়, অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় তা দেখিয়ে দিতে চায় সে। আর নিজের ইচ্ছাশক্তি ও স্বপ্নকে জয় করার অদম্য ইচ্ছা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। বগুড়া পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আলিফ। বাবা মারা গেছেন তার তিন বছর বয়স থাকতে।
একমাত্র সন্তানকে রেখে মা শাহনাজ আক্তার চাকরি করছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনে। ছোটবেলা থেকে নানাবাড়ি বগুড়া শহরের মালতিনগরে থাকে আলিফ। জন্মের পর আনন্দ করার চেয়ে যাকে নিয়ে গোটা পরিবার শোক করেছে, সেই আলিফ এখন ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে তার স্বপ্নের দিকে।
কথা হয় দুরন্ত আসিফের সঙ্গে। জানাল নিজেকে নিয়ে হতাশ নয় সে। কারো করুণাও চায় না। প্রতিবন্ধিতাকে জয় করায় স্বপ্ন দেখে সে। পরীক্ষা শেষে কিংবা স্কুলে হুইলচেয়ারে নিয়ে যাওয়া-আসার দায়িত্ব পালন করেন তার নানা শহিদুর রহমান। জানালেন, তিনি নিজেও নাতির এই অগ্রযাত্রার পথিক হতে চান।
বগুড়া স্টাফ কোয়ার্টার প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় বৃত্তি পেয়েছিল আলিফ। এরপর পুলিশ লাইন স্কুলে পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে। স্কুলের শিক্ষক, ছাত্র সবাই আসিফের বন্ধু।
শ্রেণি শিক্ষক গোরাঙ্গ সাহা বলেন, ‘ওর কারণে আমরা অষ্টম শ্রেণির ক্লাস দ্বিতীয় তলা থেকে নামিয়ে প্রথম তলায় করেছি। আবার ওর কারণেই পরীক্ষার সিট ফেলা হয় নিচের তলায়। ক্লাসে অন্যদের সঙ্গে বন্ধু ভাবাপন্ন আলিফ একদিন স্কুলে না এলে সবার মন খারাপ থাকে।’
আলিফ ফেসবুক ব্যবহার করে। তার আইডির নাম আসিফ করিম আলিফ। সেখানে তার বন্ধুর সংখ্যা এক হাজার ৫০০। ক্লাসে অন্য স্বাভাবিক ছাত্রদের মতোই কম্পিউটার চালাতে ও লিখতে-পড়তে পারে সে। আলিফের স্বপ্ন বড় হয়ে আর্কিটেক্ট হবে। নিজের শরীরের অপূর্ণতা ভরিয়ে দেবে সে মেধা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।
সূত্র: কালের কণ্ঠ