সারা দেশে ৩৩৫টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ২০০ বিদ্যালয়েই রয়েছে শিক্ষকসংকট। কাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সম্মেলনকে সামনে রেখে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) এসব তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষকসংকটে থাকা বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকেরা। মাউশি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সারা দেশের সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে সব মিলিয়ে ২ হাজার ২৫৪টি শিক্ষকের পদ শূন্য। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৪৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ। বাকিগুলোর মধ্যে ৬৯টি প্রধান শিক্ষক ও ৪৪১টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। শিক্ষকসংকট ছাড়াও কর্মচারীসংকট, অবকাঠামোগত সমস্যাসহ মোট ১০ ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকেরা। সম্মেলনে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়োগবিধি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। নিয়োগবিধি এখন অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত অনুমোদন হয়ে যাবে এবং শিক্ষক নিয়োগ শুরু করা যাবে। মাউশির কর্মকর্তারা বলেছেন, অধ্যক্ষ সম্মেলনের আদলেই প্রধান শিক্ষক সম্মেলন হচ্ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মাউশির একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১২ সালের পর থেকে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না। ফলে দিনে দিনে সমস্যা বাড়ছে। সম্মেলন সামনে রেখে মাউশি প্রধান শিক্ষকদের কাছে তথ্য চেয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোতে শিক্ষকসংকট বেশি, জেলা ও মহানগর এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে তুলনামূলকভাবে কম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের ১৭টি পদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৭টি পদ শূন্য। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ৬৫০ জন। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নরেশ চন্দ্র দাস বলেন, শিক্ষকের অভাবে আলাদা শাখা করা যাচ্ছে না। একসঙ্গে ক্লাস নিতে হচ্ছে। অন্যদিকে রাজধানীর ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষকের ৫১টি পদের একটিও শূন্য নেই। এখানে শুধু সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
রাজধানীর অন্যান্য সরকারি স্কুলেও শিক্ষকসংকট নেই বললেই চলে। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ এম ইউ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় ৫০০। বিদ্যালয়টিতে কর্মরত শিক্ষক মাত্র ছয়জন। প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের অনুমোদিত ১৫টি পদের মধ্যে ৯টিই খালি। ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল আজিজ প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘এত অল্প শিক্ষক দিয়ে এত শিক্ষার্থী পড়ানো খুবই কষ্টসাধ্য। মাঝেমধ্যে কিছু টাকার বিনিময়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। এভাবে স্কুল চালাব কী করে?’ তিনি বিদ্যালয়টিতে দ্রুত আরও শিক্ষক দেওয়ার দাবি জানান।