রাজধানীর সাতটি বড় স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ১১ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির তথ্য পেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এর মধ্যে শ্রেণিভেদে শতভাগ পর্যন্ত বেতন বাড়িয়েছে উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া মাউশির এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে নতুন বেতন স্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করে আংশিক এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছে মাউশি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বেতন বর্তমানে যা আছে তার চেয়ে কিছু বাড়িয়ে শিক্ষার্থী বেতন ঠিক করে দেওয়া হবে। ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। যেসব স্কুল ইতিমধ্যে বেশি বেতন নিয়েছে তারা এই সিদ্ধান্তের আলোকে ফেরত দেবে না হয় সমন্বয় করবে। শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ঢাকার বড় স্কুলগুলো অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধি করলে আন্দোলনে নামেন অভিভাবকেরা। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাড়তি বেতন নেওয়া স্থগিত করে এবং মাউশিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়। মাউশির কর্মকর্তারা এসব স্কুলে ঘুরে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে গত বুধবার মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।
মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) এলিয়াছ হোসেন বলেন, তাঁরা প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এখন মন্ত্রণালয় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
যোগাযোগ করা হলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, নতুন বেতন স্কেলে সরকারি এবং এমপিওভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানে তাঁদের এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষকদের ধরে রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের বেতন বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।
মাউশির প্রতিবেদন বলছে, উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম শ্রেণিতে টিউশন ফি শতভাগ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল। গত বছর যেখানে এই শ্রেণিতে এক হাজার টাকা শিক্ষার্থী বেতন ছিল, সেখানে এবার দুই হাজার করা হয়। অন্যান্য শ্রেণিতে গড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়। শ্রেণিভেদে এই স্কুলে বেতন কমবেশি আছে। যেমন প্রথম শ্রেণিতে মাসিক ফি ধরা হয় দেড় হাজার টাকা। এর আগে এই শ্রেণিতে মাসিক ফি ছিল প্রায় ৮০০ টাকা।
উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি ভার্সনে ৬১ শতাংশ ও বাংলা ভার্সনে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়ানো হয়। এখানেও শ্রেণিভেদে বেতন কম-বেশি বাড়ানো হয়েছে। যেমন চতুর্থ শ্রেণিতে ইংরেজি ভার্সনে গত বছর মাসিক বেতন ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। এ বছর তা নির্ধারণ করা হয় ২ হাজার ৫৫০ টাকা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, তাঁরা গড়ে ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলেও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ৫০ শতাংশ বেতন না বাড়ালে নতুন বেতন স্কেল দিতে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চবিদ্যালয়ে একেক শ্রেণিতে একেক রকম বেতন বৃদ্ধি করা হয়। এর মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত গড়ে ৫০ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়। মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বেতন বাড়ানো হয়। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলে গড়ে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেতন বাড়ানো হয়।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বেড়েছে ১১ শতাংশ। এই স্কুলে শ্রেণিভেদে ১০০ টাকা বেতন বাড়ানো হয়। বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য বলেন, তাঁদের পরিকল্পনা হলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বেতন ধাপে ধাপে বাড়াবেন।
মাউশির একজন কর্মকর্তা বলেন, আংশিক এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবীর বলেন, ঢাকার নামকরা কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে অন্যগুলো এমনিতেই ভালোভাবে চলত। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বেতন সরকারের ঠিক করে দেওয়া উচিত।