এ প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি কমিয়ে আনার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা কার্যকর হতে যাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালার সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নীতিমালা ঘোষণা করবেন।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে দেশের ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ হবে।
জানা গেছে, নতুন নীতিমালা অনুসারে এখন থেকে একজন প্রার্থীকে তিনটি পরীক্ষা তথা এমসিকিউভিত্তিক প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী তালিকা তৈরি হবে। তবে একজন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ নম্বর না পেলে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পাবেন না। নিবন্ধন পরীক্ষা চালু হওয়ার পর একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হতো। চলতি বছরের জুন মাসে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে আলাদা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা প্রবর্তন করা হয়। এ পরীক্ষায় যাঁরা পাস করেছেন তাঁদের বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।
নতুন নিয়ম অনুসারে এখন থেকে শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে চাহিদার ভিত্তিতে নিবন্ধন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকার শিক্ষকদের শূন্য পদের তালিকা পাঠাবেন। সেই চাহিদার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক মেধাতালিকা তৈরি করে দেবে। জেলা-উপজেলার মেধাতালিকার মধ্যে আবার বিষয়ভিত্তিক তালিকা থাকবে। সেই মেধাতালিকা থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেবে। আলাদা কোনো পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকবে না।
শিক্ষাসচিব জানিয়েছেন, নতুন করে নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের পর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। ইতিমধ্যে যাঁরা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সনদ পেয়েছেন তাঁরা যেহেতু মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তাই আগামী তিন বছর কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে তাঁদেরকেও (পুরনো সনদধারীদের) নিয়োগ দিতে পারবে। কিন্তু তিন বছর পর এ সুযোগ আর থাকবে না।
অর্থাৎ নতুন নিয়ম অনুসারে এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদকাল হবে তিন বছর। এরপর কেউ শিক্ষক নিয়োগ পেতে চাইলে তাঁকে আবার নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর সনদের মেয়াদ রাখা হয়েছিল পাঁচ বছর। পরে তা সংশোধন করে আজীবন করা হয়েছিল।
জানা গেছে, নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রায় চার লাখ প্রার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। সর্বশেষ গত ১২ জুন দ্বাদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হয়। তাতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৫২২ প্রার্থী অংশ নেন। গত ২১ জুলাই এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে স্কুল পর্যায়ে ১৩.০৯ শতাংশ এবং কলেজ পর্যায়ে ২০.৯৬ শতাংশ প্রার্থী পাস করেছেন। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট নেওয়া হয়। এ পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যের ঘটনা এখন অনেকটাই প্রকাশ্য বিষয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও এ ব্যাপারে একাধিকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, ঠিক এক বছর আগে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায়ও এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
সূত্র: কালের কণ্ঠ