শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দাবি ও ইউজিসির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি কাটছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা বৈঠক করে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার সিদ্ধান্তে ঐক্যমত্যে পৌঁছুতে পারেননি। ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করতে শুরু করেছে, এবারও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড় দিতে হবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। এতে ব্যয় হবে অর্থ, ক্ষেপণ হবে মূল্যবান সময়ও। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিজেরাই ঠিক করবে। তবে আগামীতে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে আসবে বলে আশা করছেন শিক্ষামন্ত্রী।
২০১২ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রথম বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়ার গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ব্যয়বহুল উল্লেখ করে এতে আমূল সংস্কারের সুপারিশ করা হয়। বিদ্যমান পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের একাধিক ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন, মানসিক চাপের মধ্যে থাকার বিষয়টি উঠে আসে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’র তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সরকারি ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে।
নিজস্ব পদ্ধতিতে পৃথক দিনে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পরীক্ষা নেওয়ায় অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে চলে ভর্তি পরীক্ষা। এই দীর্ঘ সময়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে একজন শিক্ষার্থী, তার অভিভাবককে ব্যয় করতে হয় মূল্যবান সময় ও অর্থ। শারীরিক পরিশ্রমের পাশাপাশি নতুন স্থানে পরীক্ষা দিতে গিয়ে নানা রকম মানসিক চাপে থাকেন এইচএসসি উত্তীর্ণরা। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শরিফুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংস্কার নিয়ে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের এই প্রস্তাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাকচ করে দেয়। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক কমিটি এবং সিন্ডিকেটে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্তের কথা জানাতে চেয়ে সময়ক্ষেপণ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৩ সালে উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছভিত্তিক ভর্তির পক্ষে মতামত দিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তাবটি সরাসরি নাকচ করে দেয়।
ওই বছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অভিন্ন পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণাও দেয়, কিন্তু সিলেটের স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধার মুখে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষায় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যায়, বিশেষায়িত যেমন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্যাটাগরি ভিত্তিতে পরীক্ষা নিতে পারবে, এতে একাধিক বিশ্ববিদ্যলয়ে আলাদা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে না। গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে আসবে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিদায়ী চেয়ারম্যান একে আজাদ চৌধুরী।
কিন্তু সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক বৈঠকে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা নিয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমীন। তিনি বলেন, বড় বড় বিশ্ববিদ্যারয়গুলো নিজেদের মত করে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট নিজেদের স্বতন্ত্র মান বজায় রাখতে চায়। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার কারণে আপাতত গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষার কোন সম্ভাবনা নেই বলে জানান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্য।