বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে পড়াশোনা করতে যেতে পারেন মূলত দুভাবে। প্রথমত নিজ ব্যয়ে, দ্বিতীয়ত স্কলারশিপ নিয়ে। উভয় ক্ষেত্রেই কিছু মৌলিক যোগ্যতা এবং মেধা প্রয়োজন। তবে স্কলারশিপের ক্ষেত্রে উচ্চ মেধা এবং অন্যান্য যোগ্যতা অপরিহার্য। যুক্তরাজ্যের এরকম কিছু স্কলারশিপ নিয়েই আমাদের আজকের এ আলোচনার আয়োজন। এসব স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে; সেগুলো হচ্ছে-
১· স্কলারশিপগুলো সম্পর্কে যতটা সম্ভব আগে থেকেই খোঁজখবর করে ধারণা রাখতে হবে।
২· আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেসব স্কলারশিপ দেওয়া হয় সেগুলোতে যথাসময়ে আবেদন করতে হবে।
৩· অন্যান্য স্কলারশিপের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত বছরখানেক আগেই আবেদন করতে হবে। অনেক সময় ডেডলাইন হেরফের হয়ে থাকে-কাজেই সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
৪· স্কলারশিপের জন্য আবেদনপত্রের ভাষা হতে হবে সাবলীল, সহজবোধ্য এবং সংক্ষিপ্ত। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে স্কলারশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।
৫· কিছু কিছু স্কলারশিপ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের তুলনায় কম পরিমাণে অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকে-যা দিয়ে কোর্স সমাপ্ত করা সম্ভব নয়। সেসব ক্ষেত্রে বিকল্প অর্থসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
নিচে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য যুক্তরাজ্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শ্রেণীর স্কলারশিপ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হলো।
কমনওয়েলথ স্কলারশিপ অ্যান্ড ফেলোশিপ প্ল্যান (সিএসএফপি)ঃ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় সহায়তার জন্য প্রতিবছর সারা পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীকে এই কার্যক্রমের আওতায় এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এর বেশির ভাগই বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রির জন্য শিক্ষা অথবা গবেষণার জন্য দেওয়া হয়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে রিসার্চ স্টাডি অথবা নন-ইউনিভার্সিটি কোর্সসমূহও বিবেচনা করা হয়। তবে আন্ডারগ্রাজুয়েট পর্যায়ে এ বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে খুবই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে।
ব্রিটিশ সিভেনিং স্কলারশিপঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপের সুযোগ দেওয়া হয়। বিশেষ করে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে-সেসব দেশের শিক্ষার্থীরাই অধিকহারে এ সুযোগ পেয়ে থাকেন। যেকোনো বিষয়ে ফুলটাইম পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি কোর্স অথবা ফুলটাইম রিসার্চের ক্ষেত্রে এই স্কলারশিপের সুযোগ দেওয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন মাস বা ছয় মাসের শর্ট টার্মেও কর্মমুখী কোর্সে এ বৃত্তি দেওয়া হয়।
টেকনিক্যাল কো-অপারেশন ট্রেনিং (টিসিটি)- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগের অর্থায়নে একটি গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট স্কিমের আওতায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে এই লোকাল ট্রেনিং সুবিধা দেওয়া হয়। এটি একটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম না হলেও প্রতিবছর প্রায় চার হাজার নতুন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। সাধারণত অনূর্ধ্ব ৪৫ বছরের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেন। তাঁদের লিখিত ও মৌখিক ইংরেজি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ট্রেনিং হয়ে থাকে নানা বিষয়ে। আর সময়কাল তিন মাস থেকে তিন বছর।
ডিএফআইডি শেয়ার্ড স্কলারশিপ (ডিএফআইডি এসএসএস)- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ এবং নির্ধারিত ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি কতৃêক যৌথ অনুদানে পরিচালিত এ স্কিমের আওতায় উন্নয়নশীল কমনওয়েলথ দেশসমূহের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে পরিচালিত। পোস্ট গ্রাজুয়েট এবং আন্ডার গ্রাজুয়েট কোর্সের ক্ষেত্রে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। এ বৃত্তি সুবিধায় শিক্ষার পূর্ণ খরচ, যাতায়াতের বিমান ভাড়া, মেইনটেনেন্স এবং থিসিস ব্যয়ভার বহন করা হয়।
ওভারসিস রিসার্চ স্টুডেন্টস অ্যাওয়ার্ডস স্কিম (ওআরএসএএস)- ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে নিয়মিত উচ্চমানের গবেষণা শিক্ষার্থীর কার্যক্রম বহাল রাখা এ অ্যাওয়ার্ডসের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিবছর ৮৫০টি নতুন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে যথেষ্ট মেধাবী শিক্ষার্থীরাই সাধারণত এর সুযোগ পেয়ে থাকেন। এটি একটি পোস্ট গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ। শিক্ষার্থীকে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণকালীন গবেষণা শিক্ষা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট থেকে উচ্চ ডিগ্রি গ্রহণে আগ্রহী থাকতে হয়। মেধা এবং রিসার্চ পটেনশিয়ালই শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখেন। প্রথমত এক বছরের জন্য এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। তবে প্রয়োজনে তা দুই বা তিন বছর পর্যন্ত নবায়ন করা যায়। প্রার্থী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশিরা যাঁরা স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী, তাঁরা এসব বৃত্তির ব্যাপারে ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিলে যোগাযোগ করতে পারেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ঠিকানা ৫ ফুলার রোড, ঢাকা। এ ছাড়া সিএসএফপি এবং ডিএফআইডি এসএসএস বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য জানতে পারেন নিচের ঠিকানায় যোগাযোগ করে।