প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রেখে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক বদলির নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতেই নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা, ২০১৫’ নামে এ নীতিমালা রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয়-২ শাখা থেকে জারি করা হয়। শিক্ষকদের বদলি-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারির মাত্র সাড়ে তিন মাসের মাথায় নতুন এই নীতিমালা জারি করা হলো।
নতুন নীতিমালায় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের যে কোনো সময় সংযুক্তি প্রদান করে বদলি করতে পারবে- এমন বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় ছাড়া আর কোনো কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সংযুক্তির আদেশ দিতে পারবে না। এ ছাড়া সংযুক্তি আদেশ বাতিলের ক্ষমতাও এককভাবে মন্ত্রণালয়ের হাতেই।
নতুন এ নীতিমালায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউইও) ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) বদলি-সংক্রান্ত একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ইউইওর একক সিদ্ধান্তে নয়, বরং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশ নিয়ে শিক্ষক বদলি করতে হবে। আর সুপারিশ কার্যকর করবেন ডিপিইও।
নতুন নির্দেশিকা জারির ফলে এর আগের সব নীতি, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদায়নের ক্ষেত্রেও নতুন এই নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হবে। তবে সদ্য জাতীয়করণ করা এসব বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের নামে আদালতের দেওয়া বদলি স্থগিত নির্দেশনা থাকলে তিনি বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না।
সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষাবর্ষের জানুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যে শিক্ষক বদলি সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ বছর গত ১২ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক বদলি নীতিমালা, ২০১৫’ নামে আরেকটি নীতিমালা জারি করেছিল।
বদলির নতুন নিয়ম: নীতিমালায় বলা হয়েছে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রে একই উপজেলার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবদলির অনুমোদন দিতে পারবেন। পরে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার বদলি আদেশ জারি করবেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আন্তঃউপজেলা/থানার মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে বদলি করতে পারবেন। সিটি করপোরেশন আওতাধীন থানার ক্ষেত্রেও তিনি এরূপ বদলি করতে পারবেন। বিভাগীয় উপপরিচালক তার নিজ অধিক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সুপারিশক্রমে সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃজেলা বদলি ও প্রধান শিক্ষকদের একই উপজেলা, আন্তঃউপজেলা ও আন্তঃজেলা বদলি করতে পারবেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপপরিচালকের সুপারিশক্রমে যে কোনো সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের আন্তঃবিভাগ বদলি করতে পারবেন। একইভাবে তিনি সিটি করপোরেশন এলাকাধীন থানার ক্ষেত্রে সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষকদের আন্তঃথানা/আন্তঃবিদ্যালয় বদলি করতে পারবেন। সর্বোপরি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে যে কোনো শিক্ষককে যে কোনো কারণে বদলি করতে পারবে। এতে আরও বলা হয়, যেসব বিদ্যালয়ে চারজন বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন কিংবা শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১ :৪০-এর বেশি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন পূর্বক সাধারণ বদলি করা যাবে। যাদের স্থায়ী ঠিকানা জেলা সদরের পৌরসভা, জেলা সদর বা সিটি করপোরেশন হওয়ার পরও পদ শূন্য না থাকায় বাইরে পদায়ন করা হয়েছে, তারাও একইভাবে বদলি হতে পারবেন। বদলির পর এক বছর না যাওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষক পুনর্বদলির যোগ্য হবেন না। কোনো শিক্ষকের স্ত্রী/স্বামী সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে তাকে স্ত্রী বা স্বীমীর কর্মস্থলে বদলির সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে এ সুবিধা কর্মজীবনে সর্বোচ্চ দু’বার নেওয়া যাবে। বদলির এক বছর অতিক্রান্ত না হলে কোনো শিক্ষক পুনর্বদলির জন্য বিবেচিত হবেন না। প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলে তার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।