দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৭ শতাংশ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেই, যা সংখ্যায় ৮৫ হাজার ৯১৫। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক জরিপে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্ধেকের বেশি শিক্ষক কার্যকরভাবে সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝেন না। ফলে প্রাথমিকে গুণগত মান নিশ্চিত হচ্ছে না। অনেক শিশু ভালোভাবে না শিখেই ওপরের শ্রেণিতে উঠছে।
প্রাথমিক শিক্ষার এ রকম পরিস্থিতিতে ‘মানসম্মত শিক্ষা, জাতির প্রতিজ্ঞা’ স্লোগান নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে শুরু হচ্ছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ। শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইউনেসকোর প্রতিবেদন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপ-২০১৪ এবং একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনসহ প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তি ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষকদের বিষয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ শেষ করা ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রশিক্ষণ নেওয়ার আগে শিখন পদ্ধতিগুলো তিনি ভালোভাবে বুঝতেন না। ফলে ক্লাসে ভালোভাবে পড়াতে পারছেন কি না, সেটাও বুঝতে পারতেন না। এখন কোন ধাপে কী পড়াতে হবে, সেগুলো আয়ত্ত করতে পারায় ক্লাসে আগের চেয়ে ভালোভাবে পড়াতে পারছেন। তবে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রশিক্ষণ থেকে শেখা সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
ইউনেসকোর সহযোগিতায় করা ‘সবার জন্য শিক্ষা’ জাতীয় পর্যালোচনা, বাংলাদেশ-২০১৫ প্রতিবেদনে বলা হয়, শিখন-শেখানোর প্রক্রিয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ‘নীরবে বাদ পড়ছে’। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, গুণগত শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষক। এ জন্য স্বচ্ছ নিয়োগ-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। নিয়োগের পর সব শিক্ষককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা ঠিকমতো পাঠদান করাচ্ছেন কি না, সেটা দেখার জন্য ব্যক্তিপর্যায়ে যথাযথ সহায়তা করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এত দিন প্রাথমিক শিক্ষকদের এক বছর মেয়াদি (কার্যত নয় মাস) সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (সিইনএড) কোর্সের নামে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এখন এই কোর্সকে ডিপ্লোমা ইন প্রাথমিক শিক্ষা করা হয়েছে। মেয়াদ দেড় বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর বলেন, যে সুযোগ রয়েছে, তাতে তাড়াতাড়ি সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য এখন চিন্তাভাবনা চলছে, যাঁদের এই ডিপ্লোমা কোর্স থাকবে, তাঁদের ভবিষ্যতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।
সূত্র: ক্যামপাাস লাইভ ২৪ ডট কম