শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে ১০০ নম্বরের পাবলিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩৩ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্পোকেন ইংলিশ আর স্পোকেন অ্যারাবিক চালু হবে। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পুল করা হয় সেখান থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।১২ বছরে শিক্ষাজীবন শেষেও ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার ব্যর্থতা মুছে ফেলতেই স্পোকেন ইংলিশের প্রচলন শুরু হচ্ছে। আর মাদ্রাসা কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের বসতে হবে স্পোকেন অ্যারাবিক পরীক্ষায়। চলতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসা ডাবল জিপিএ পাওয়াদের বিস্ময়কর ব্যর্থতা এবং ইংরেজি বিভাগে ভর্তির জন্য মাত্র দুজনের উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের এই উদ্যোগ।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বলেন, ‘সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে। পাসের হার বেড়েছে। মান বাড়ার দাবিও আমরা করি। তাহলে পাস নম্বর বাড়াতে সমস্যা কোথায়? আর বছরের পর বছর পড়েও ইংরেজি বলতে না পারার ব্যর্থতা থেকে তো বের হয়ে আসতে হবে। কাউকে না কাউকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে।’
সম্প্রতি শিক্ষাসচিব বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলেছেন, পরীক্ষায় পাসের নম্বর বাড়াতে হবে। ৩৩ থেকে বাড়িয়ে তা ৪০ করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের বেশি সময় পড়ার টেবিলে থাকতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরাও পাস নম্বর বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে ২০০ নম্বরের ইংরেজি পড়তে হয়। এই নম্বর কমিয়ে ১৯০ করা হবে। বাকি ১০ নম্বর বরাদ্দ করা হবে স্পোকেন ইংলিশের জন্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি বোর্ড স্পোকেন ইংলিশ পরীক্ষা নেবে। ভাইভা আকারে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই একজন শিক্ষার্থীকে বাধ্য করতে হবে ইংরেজি বলায়।
যেসব শিক্ষার্থী ইংরেজিতে একটি বাক্যও বলতে পারবে না, তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নেবে সংশ্লিষ্ট স্কুল। আর মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য স্পোকেন অ্যারাবিক চালু হবে। আলিম, দাখিল, ফাজিল ও কামিল পাস করতে হলে আরবিতে কথা বলতেই হবে।
একটি বোর্ডের চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্পোকেন ইংলিশ হয়তো চালু করা যাবে। কিন্তু মাদ্রাসায় কী হবে তা বুঝতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়ারা ‘মে আই কাম ইন স্যার’ বলে বোর্ডের সামনে যেতে পারবে না- এটা খুবই দুঃখজনক। আসলে বাধ্য করতে হবে। বিদেশে গিয়ে ইংরেজি তো বটেই, আরবি পর্যন্ত শিখে ফেলে বাংলাদেশিরা। স্পোকেন ইংলিশ চালু করতে পারলে বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে খুব ভালো ফল পাওয়া যাবে। আর আরবি ভাষা জানলে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরিতে পাওয়া যাবে অগ্রাধিকার।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি শিক্ষিতের দেশটি ঘুরে এসে তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, সেখানে পাবলিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৪০। আমাদের দেশেও শিক্ষা সম্প্রসারিত হয়েছে। পাসের হার বেড়েছে। তাই আমরাও পাস নম্বর বাড়াতে পারি। ভারত থেকে ফিরে এসেও একদল শিক্ষক জানিয়েছেন, সেখানে পাস নম্বর ৪০। তবে রাজ্যভেদে বিভিন্ন নিয়ম আছে। যেসব রাজ্যে শিক্ষার হার বেশি, সেসব রাজ্যে পাস নম্বরও বেশি।