বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির বদলে শিক্ষক নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে ‘জেলা শিক্ষক নিয়োগ কমিটি’। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক এ কমিটির প্রধান ও জেলা শিক্ষা অফিসার সদস্য সচিব থাকবেন। এ কমিটিই মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক বাছাই করে দেবে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ কেবল নিয়োগ অনুমোদন দেবে। এর আগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাতালিকা প্রস্তুত করে শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগের সুপারিশ করবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
এ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কাঠামো ভেঙে শিক্ষার মানোন্নয়ন, যোগ্য শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) আদলে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে এনটিআরসিএর নাম বদলে বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন (এনটিএসসি) করে আইন ও বিধিমালার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে বর্তমানের একচ্ছত্র ক্ষমতা হারাচ্ছে পরিচালনা কমিটি। এ নিয়ে আজ বুধবার দুপুর দেড়টায় নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশে প্রায় ১৯ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, সাড়ে তিন হাজার কলেজ ও সাড়ে নয় হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। বর্তমান নিয়মে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারে। এতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সুযোগ থাকে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত শিক্ষক নির্বাচন কমিশন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরভিত্তিক শূন্য পদের সংখ্যা নিরূপণ; শূন্য পদের সংখ্যা অনুযায়ী লিখিত নিবন্ধন পরীক্ষার পর নির্ধারিত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাতালিকা করবে। এর পর মেধাক্রম ও চাহিদা অনুযায়ী জেলা শিক্ষক নিয়োগ কমিটি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত প্রার্থীদের বাছাই করে তাদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করবে। পরিচালনা কমিটি শুধু নিয়োগপত্র দেবে। তবে কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর না পেলে মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হবেন না।
বর্তমান নিয়মে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে
পরিচালনা কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। পরিচালনা কমিটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেন। এর পর পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। এর ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ হয়। বর্তমান নিয়মে এমপিরা নিজ নির্বাচনী এলাকার সর্বোচ্চ চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে পারেন। অন্য প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন এমপির পছন্দের ব্যক্তিরা। ফলে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং আর্থিক বিষয় ও স্বজনপ্রীতি মুখ্য হয়ে ওঠে।
এনটিআরসিএ সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন পরীক্ষা চালু হয়। এ পর্যন্ত ১১ বার বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এসব নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ প্রার্থী পাস করেছেন। এনটিআরসিএ জানিয়েছে, গত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা থেকে নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে প্রার্থীদের এখন ১০০ নম্বরের বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। এতে উত্তীর্ণরাই কেবল লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০টি জেলাভিত্তিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। আর লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র প্রয়োজন অনুসারে নির্ধারণ করা হচ্ছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অনলাইনে আবেদন করার পর প্রথম ধাপে এক ঘণ্টার ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নে বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়। স্কুল পর্যায়ে পরীক্ষা প্রথম দিন এবং কলেজ পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হয়। আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার কোনো বিধান ছিল না।