কাগজে ছাপানো বইয়ের পাশাপাশি এখন থেকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভার্সনেই লেখাপড়া করতে পারবে প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ব্যাগ ভর্তি বইয়ের বদলে হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল, ট্যাব বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেই ডিজিটাল পাঠ্যবইগুলো পড়ে ফেলতে পারবে তারা। ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা ভিডিও দেখে শিখতে পারবে অনেক কিছু আনন্দ আর মজার সঙ্গে।
রোববার ‘প্রাথমিক শিক্ষা কনটেন্ট ইন্টার-অ্যাক্টিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল ভার্সন রূপান্তর’ প্রকল্পের উদ্ধোধনের মাধ্যমে এ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর সরকারের বই ছাপাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, খুদে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান আরো আনন্দময় করার পাশাপাশি মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে চিন্তাশক্তির বিকাশ, কল্পনা শক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মনন সৃষ্টি করতে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলোকে ইন্টার-অ্যাক্টিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের ছবি, চার্ট, ডায়াগ্রাম, অডিও, ভিডিওসহ মাল্টিমিডিয়া উপকরণ সংযোজন করে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়গুলোকে আরো আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করা হয়েছে এতে। এর ফলে শিশুদের শিক্ষার আনন্দদায়ক পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি ও বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় ও আনন্দময় হবে।
শিশু শিক্ষার্থীরা কন্টেন্টে ক্লিক করে ভিডিও দেখে শিখতে পারবে। শ্রেণিকক্ষে ট্যাবের মাধ্যমে খুদে শিক্ষার্থীরা বইয়ের কনটেন্ট ব্যবহার করে পড়তে পারবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় আরো মনোযোগী হবে। শিক্ষকরাও বইয়ের ডিজিটাল কনটেন্ট ক্লাসরুমে ব্যবহার করে পাঠদান করাতে পারবেন। এতে করে পাঠদান আন্দময় হয়ে উঠবে। স্মার্টফোন ব্যবহার করেও এসব বই পড়তে পারবে শিক্ষার্থীরা।
ইন্টারঅ্যাকটিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল কন্টেন্টের ওয়েবসাইট (digitalcontent.ictd.gov.bd) থেকে বিনামূল্যে ডিজিটাল বই ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
প্রাথমিক স্তরের মোট ৩৪টি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ১৭টি মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে ইংরেজি পাঁচটি পাঠ্যবই রূপান্তর করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এবং বাকি ১২টি রূপান্তর করেছে ব্র্যাক। ১৭টি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে প্রথম শ্রেণির তিনটি (গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইংরেজি), দ্বিতীয় শ্রেণির তিনটি (গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইংরেজি), তৃতীয় শ্রেণির তিনটি (গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইংরেজি), চতুর্থ শ্রেণির চারটি (গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইংরেজি, বিজ্ঞান) এবং পঞ্চম শ্রেণির চারটি (গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ইংরেজি, বিজ্ঞান) রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বংলাদেশ গড়ার নির্বাচনী ঘোষণার অংশ হিসেবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ‘প্রাথমিক শিক্ষা কনটেন্ট ইন্টার-অ্যাক্টিভ মাল্টিমিডিয়া ডিজিটাল ভার্সনে রূপান্তর’ শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় সারা দেশের দেড় হাজার স্কুলে এ পদ্ধতিতে পাঠদান করা হবে। আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে এবং এনসিটিবির সিলেবাসের আলোকে ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
২০১৪ সালের মার্চ থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চার কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলো। কর্মসূচি বাস্তবায়নে কারিগরি সহযোগিতা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও সেভ দ্য চিলড্রেন। দেশের ৬৩ হাজার ৬০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম রয়েছে।
রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের উদ্ধোধন করেছেন। এ সময় তিনি বাকি স্কুলগুলোতেও মাল্টিমিডায় ক্লাস রুম করার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরিতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ও প্রাক্তন ছাত্রদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
আইসিটি বিভাগ জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-প্রশিক্ষক, ব্যাকরণ ও উচ্চারণ বিশেষজ্ঞ, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, শিশু মনোবিদ, রঙ বিশেষজ্ঞ, প্রোগামিং ও অ্যানিমেশন বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি বইয়ের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করা হয়েছে। এরপর এনসিটিবি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
আইসিটি বিভাগের সহকারী প্রধান ও প্রকল্পের পরিচালক আকতার হোসেন বলেন, এখন থেকে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে শিখতে পারবে। আইসিটি বিভাগ খুদে শিক্ষার্থীদের হাতে ট্যাব তুলে দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহী। আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের উপযোগী, আট ঘণ্টা চার্জ থাকে এমন ট্যাব দিয়ে ইন্টার-অ্যাকটিভ পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্র্যাক শিক্ষা প্রকল্পের ব্যাবস্থাপক বিএ ওয়ালিদ নিউটন বলেন, প্রতি বছর বই ছাপাতে যে পরিমাণ কাগজের প্রয়োজন হয়, এর জন্য আর গাছ কাটার প্রয়োজন হবে না। সরকারের বই ছাপাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হবে না। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কার্টুনের প্রতি আগ্রহ না হয়ে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হবে। সেভাবেই বইগুলো তৈরি করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রাথমিকের বাকি বইগুলোসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের বই ডিজিটাল করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।