চোখে আলো নেই। তবু নিজেকে আলোকিত করে যাচ্ছেন। তিনি নীলফামারীর সেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী জাকারিয়া হোসাইন। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস (বিএসএস) কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
জাকারিয়া হোসাইন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামের বাসিন্দা। ২০০৬ সালে স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। ২০০৭ সালে এইচএসসি পড়ার সময় হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারান। এতে তিনি আর পরীক্ষা দিতে পারেননি। ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়ে বিভিন্নজনের কাছে আবেদন জানান তাঁর হতদরিদ্র মা জাহানারা বেগম। এ নিয়ে ২০০৮ সালের ২৭ আগস্ট প্রথম আলোর নারীমঞ্চ পাতায় ‘ছেলের হারানো দৃষ্টি ফিরে পেতে মায়ের আকুতি, আমার চোখ দুটো ওর চোখে বসিয়ে দিন’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অনেকেই। সহযোগিতার অর্থেই ভারতের চেন্নাইতে দুই দফায় জাকারিয়ার চোখে অস্ত্রোপচার হয়। তারপরও তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফেরেনি।
দৃষ্টিশক্তি ফিরে না পেলেও সাহায্যের অবশিষ্ট অর্থকে পুঁজি করে জাকারিয়া আবারও হাতে তুলে নেন বই-খাতা। ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শুরু হয় তাঁর। এভাবেই পড়ালেখা করে ২০১০ সালে লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর আর্থিক অনটনে যখন তাঁর লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে, তখন ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রথম আলো তাঁর পাশে দাঁড়ায়। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে প্রথম আলো থেকে তাঁকে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে আবারও যোগ্যতার প্রমাণ রাখলেন জাকারিয়া।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আশরাফুল আলম প্রামাণিক প্রথম আলোকে বলেন, জাকারিয়া অত্যন্ত মেধাবী। এ বছর এই কলেজ থেকে ২৫৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন ১৫৭ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণি পেয়েছেন পাঁচজন। এ পাঁচজনের মধ্যে একজন জাকারিয়া। জাকারিয়া একমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর মোট নম্বর ৮৬৫। আশরাফুল আলম বলেন, সুযোগ পেলে জাকারিয়া আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবেন।
২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাকারিয়ার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মায়ের সঙ্গে তিনি বাইরে গিয়েছিলেন। মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ফিরলেন মায়ের হাত ধরেই। ফলাফলের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাকারিয়া হোসাইন বলেন, ‘আমার দৃষ্টিশক্তি নেই, এটা কখনো মনে হয় না। সুযোগ পেলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে চাই। আমি প্রথম আলো পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে কলেজের সব শিক্ষকের প্রতিও আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা।’