চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুল প্রতীক্ষিত চতুর্থ সমাবর্তন আজ রোববার অনুষ্ঠিত হবে। সমাবর্তনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লেগেছে উৎসবের আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে চতুর্থ বারের মত। উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
এদিকে সমাবর্তনকে ঘিরে উৎসবের রঙে সেজেছে ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট, সোহরাওর্য়াদী মোড়, সহ বিভিন্ন মোড়ে বসানো হয়েছে আলোর ফোয়ারা। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরী করা হয়েছে মূল মঞ্চ। সমাবর্তন অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে ক্যাম্পাসে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা । সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থলের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী সকলকে দুপুর একটার মধ্যে মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে আইপি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ২৮জানুয়ারী বিকেল থেকে সমাবর্তন মঞ্চের আশেপাশে জন সাধারণের চলাচলে আরোপ করা হয়েছে বিধি নিষেধ।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিষ্ট্রার এবং সমাবর্তন কমিটির সচিব প্রফেসর ড. কামরুল হুদা বলেন, সমাবর্তন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাথে এক সভায় মিলিত হয়। সভায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বৈধ শিক্ষার্থীদের ছাড়া অবৈধ শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের আগের দিন থেকে সিট ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সকল দোকানপাট সমাবর্তনের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সমাবর্তন প্রার্থী ছাড়া তাদের কোন মেহমান সমাবর্তন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী গ্র্যাজুয়েটরা
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায়, এ বছর সমাবর্তন নিতে আবেদন করেছে ৭ হাজার ২৯৩ জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী। যা পূর্বের সকল সমাবর্তন থেকে কয়েক গুণ বেশি। ফলে এই সমার্বতকে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। সমাবর্তন প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে র্দীঘ ১০ বছরের বিরতি। এর আগে তৃতীয় সমাবর্তন হয়েছে ২০০৮ সালে। এ বছর সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ইমেরেটরস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মূল মঞ্চ সাজানো হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে তৈরি করা হয়েছে হ্যালিপাড। হেলিকপ্টার থেকে নেমে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান।
এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে চ্যান্সেলর পদক পাচ্ছেন নয়জন শিক্ষার্থী। এছাড়া ২৫ পিএইচডি ও ১৩ গবেষককে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠান স্থলের চারপাশ ঘিরে ফেলা হবে নিরাপত্তার চাদরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে আইপি ক্যামেরা দ্বারা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে পারলেও সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে পারবেন না। যাদের অনুমতি আছে তারাই শুধু মূল অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে পারবেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীকে কিছু নিয়ম কানুনও মানতে হবে। অংশগ্রহণকারীরা অনুষ্ঠানে দুপুর একটার মধ্যে প্রবেশ করার পাশাপাশি মুঠোফোন, ক্যামেরাসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না।
সমাবর্তনে অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েটদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী শাটল ট্রেন বটতলী রেলস্টেশন থেকে ক্যাম্পাস অভিমুখে সকাল ৭টা, সাড়ে ৭টা, সাড়ে ৮টা, সাড়ে ৯টা, সাড়ে ১০টা, বিকাল ২টা ১০ মিনিটে ও রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যাবে। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকাল ৮টা ২০ মি, ৮টা ৫০ সকাল ১০টা, বিকাল ৫ টায়, সন্ধ্যা ৬টায়, সন্ধ্যা ৭টা ও রাত সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
এদিকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটরা গত শুক্রবার ও শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মিলনায়তন থেকে গাউন সংগ্রহ করেছেন। রোববারও ক্যাম্পাসে ৭২টি বুথ বসানো হবে। অংশগ্রহণকারীরা এসব বুথ থেকেও গাউন সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে গাউনের সাথে ক্যাপ না পাওয়ায় সাধারণ গ্র্যাজুয়েটরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সুত্রে জানায়, ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর একবার বিশেষ সমাবর্তন সহ মোট ৪ বার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। যার মধ্যে ১৯৯৪ সালের ৬ ফেব্রয়ারী প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এই সময় উপাচার্য হিসেবে ছিলেন প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী যিনি (আর আই চৌধুরী) হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ছিলেন প্রয়াত উপাচার্য আব্দুল করিম।
এরপর দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালের ১৩ মার্চ। এই সময় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান এবং সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিতীয় সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জিল্লুর রহমান।
সর্বশেষ ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর আয়োজিত তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় প্রফেসর ড. বদিউল আলম উপাচার্য থাকাকালীন সময়ে এবং ঐ সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ছিলেন বিখ্যাত ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমেরেটরস জামাল নজরুল ইসলাম। দশ বছর আগে হওয়া ঐ সমাবর্তনে আচার্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ।
তাছাড়া ১৯৮১ সালের ১৮ জানুয়ারী একবার বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় উপাচার্য হিসেবে ছিলেন ড. আব্দুল করিম এবং সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ছিলেন তৎকালীন আচার্য এবং বিচারপতি আব্দুস ছাত্তার।
উল্লেখ্য,গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর সমাবর্তন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণবশত তা স্থগিত করা হয়। ২০১৬ সালে ৩১ জানুয়ারী পূণ নির্ধারীত তারিখ ঠিক করা হয়।